করোনায় ভোমরা বন্দর হারিয়েছে স্বাভাবিক গতি, রাজস্ব ঘাটতি ৩৯৩.৬৬ কোটি টাকা
করোনা প্রভাব বাংলাদেশে শুরু হওয়ার পর থেকেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর, কম হচ্ছে রাজস্ব আদায়ও। ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক স্টেশন ভোমরা হতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে গত ১১ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতি রয়েছে ৩৯৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি বাণিজ্যের ওপর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এক হাজার ১৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৮৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ঘাটতি ছিল ৬০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা।
ভোমরা বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএন্ডএস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাকসুদুর রহমান বলেন, 'করোনার প্রার্দুভাব বাংলাদেশে শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ৫ মার্চ থেকে সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ হয়ে যায় বন্দর। তিন মাস বন্ধের পর ১৯ জুন থেকে আবার শুরু হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে আজও বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সেই স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। করোনা মহামারির আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেত ১০০টি পণ্যবাহী ট্রাক। বর্তমানে ভারত থেকে প্রতিদিন আসছে ২৭৫-৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক আর ভারতে যাচ্ছে ৪০-৫০টি ট্রাক। করোনার প্রভাবে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে গতি কমেছে'।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভোমরা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, '১৯৯৬ সালে যখন ভোমরা বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি টাকা। এখন হাজার কোটি টাকার বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। মূলত বন্দর দিয়ে ৭৫টি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও বাস্তবে ২৫-৩০টি পণ্য আমদানি হয়'।
তিনি বলেন, 'সোনা মসজিদ ও বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের প্রতিযোগিতা শুরু থেকেই। পূর্বে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হত না। ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করত। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফল আমদানি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়িক সুবিধার্থে অনেক ব্যবসায়ী এখন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করায় ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কমেছে। তাছাড়া করোনার প্রভাবেও আমদানি রপ্তানি কম হচ্ছে'।
ভোমরা স্থল বন্দর কাস্টমসের সহকারি কমিশনার আমির মামুন জানান, করোনা মহামারিসহ নানা কারণে বন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে ৬০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ১২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, 'করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা তিন মাস বন্ধ ছিল ভোমরা বন্দর। ঐ তিন মাসে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে আবারও আমদানি-রপ্তানি অনেক কমেছে। পূর্বের ন্যায় ভারত থেকে কম সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করছে সে কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে প্রায় ২৬ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে'।