করোনায় মৃতের সংখ্যা লুকাচ্ছে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় মৃত্যুসংখ্যার সঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো মৃতের তথ্যের মিল থাকছে না। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে মৃতের সংখ্যা কম দেওয়া হচ্ছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যের ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা দেয়। অথচ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে মৃতের সংখ্যা হাসপাতালের মৃত্যুর হার অনুযায়ী বেশি হওয়ার কথা।
কারণ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতদের তথ্যই দিতে পারে। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে হাসপাতালে মৃত ছাড়াও যেকোনো জেলার সদর হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতদের তথ্যও সংগ্রহ করে দিতে হয়। এইজন্য হাসপাতালে মৃতদের সংখ্যা অনুযায়ী জেলার তথ্যেও মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা। অথচ ঘটছে তার উল্টো।
গত ১২ দিনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো মৃতের সংখ্যা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেে করোনায় মৃত ১১ জনের তথ্য বেশি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে মৃতের সংখ্যা ১১ কম পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ১২ দিনে করোনার উপসর্গ ও করোনা নিয়ে মোট ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে রাজশাহীতে ১৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ জন, নাটোরে ৫ জন, নওগাঁয় ৪ জন, পাবনায় ২ জন ও সিরাজগঞ্জে একজন করোনায় মারা গেছেন।
অথচ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্যে এই ১২ দিনে মৃতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৫৩। অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে ১১ জন মৃতের সংখ্যা কম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহী থেকে মৃতের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে ১২, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮, নাটোরে ৬ ও নওগাঁয় ৭। যেমন গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও নওগায় একজন করে মারা গেছেন। অথচ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর থেকে কোনো মৃত্যু দেখানো হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুধু দুজনের মৃত্যু দেখানো হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, 'আমাদের করোনায় মৃতের সব তথ্য বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে শুরু করে সিভিল সার্জন কার্যালয় হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়। ফলে তারা কেন মৃতের সংখ্যা কম দিচ্ছে, তা বলতে পারছি না।'
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, 'সিভিল সার্জন অফিসের কাজ হাসপাতালে কেউ মারা গেলে সেই তথ্য দেবেই। আবার বাড়িতে বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেখানেই হোক না কেন, জেলার মধ্যে করোনায় কেউ মারা গেলে তার তথ্যও স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আমার মনে হয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে!'
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।