কোভিড-১৯: ঢাকার বাইরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে
নওগাঁয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ১৩ মে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত জেলাটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪৩ জন, এর মধ্যে গত এক মাসে (১ মে-১ জুন) মারা গেছেন ১১ জন। মঙ্গলবার ৩ জন মারা গেছেন, যা জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। মঙ্গলবার জেলাটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ছিল ৪৭.৮৬%.
শুধু নওগাঁ নয় ঈদের পর ঢাকার বাইরে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাসের প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়েভে ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হলেও ঈদের পর ঢাকার বাইরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর যশোরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সম্প্রদায় সংক্রমণ ঘটেছে।
সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে যশোরের স্থানীয় ৮ জন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে কারোরই ভারতে যাওয়ার কোন ইতিহাস নেই।
এর আগে ২৮ মে ভারতে যায়নি এমন সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন পেয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
গত ৮ মে ভারত থেকে আসা দুই জনের শরীরে প্রথম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরন হয়। এ নিয়ে দেশে ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত মোট ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
এখনই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর না হলে এবার সারাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৪১ জন। মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ১ হাজার ৭৬৫ জনের দেহে। তবে বর্তমানে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যাও কিছুটা কম। মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ২ হাজার ৩০৫ জনে।
গত এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ হার ৯% থেকে ১০% এর মধ্যে উঠানামা করছে। দৈনিক কেস ১৪০০ থেকে বেড়ে ১৭০০ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ১৭ থেকে বেড়ে ৪১ এ পৌঁছেছে। বেশিরভাগ মৃত্যু ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোতে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে মৃত্যু বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানি জানান, রাজশাহীতে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। মঙ্গলবার রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ছিল ৫০%। এখনি রাজশাহীতে কঠোর লককডাউন না দিলে শুধু রাজশাহী নয় সারাদেশে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
পুরো রাজশাহী জেলার কোভিড রোগীদের শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ২১৭টি জেনারেল বেড ও আইসিইউ বেড ১৫টি। মঙ্গলবার হাসপালের জেনারেল বেডে ২১৬ জন ও আইসিইউতে ১৫ জন রোগী ভর্তি আছে। রাজশাহীর পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁর কোভিড রোগীরা রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়। কারণ ওই জেলাগুলোতে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ নেই।
করোনাভাইরাসের প্রথম ওয়েভে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ কোভিড রোগী ছিল ৯৮ জন। দ্বিতীয় ওয়েভে সর্বোচ্চ রোগী ছিল ১৩৬ জন। কিন্তু ঈদের পর সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে।
শামীম ইয়াজদানি বলেন, আগে সপ্তাহে দুই তিনজন রোগী কোভিডে মারা যেতো তাই মানুষের মধ্যে করোনার ভয় কম ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু হচ্ছে। গত তিন দিনে মারা গেছেন ২৩ জন রোগী।
সাতক্ষীরায় মঙ্গলবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ হার ছিল ৪১.২%, দেশব্যাপী যা ৯.৬৭%.
জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, "কমিউনিটিতে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়া অনেক বড় উদ্বেগের বিষয়। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোভিড টেস্ট বাড়াতে হবে। পজেটিভ রোগী পাওয়া গেলেই তাকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙ্গতে না পারলে সংক্রমণ দ্রুত বাড়বে। আমরা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছি, তা বাস্তবায়নে দেরি করা ঠিক হবেনা"।
গত ৩০ মে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙ্গতে ঝুঁকিপূর্ণ সাত জেলায় লকডাউনের পরামর্শ দেয় অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জেলাওয়ারী বা গুচ্ছ লকডাউন দিতে দেরি হলে এবং ভাইরাসের ভারতীয় ধরনগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা তাদের।
এই সাত জেলা হলো; নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং খুলনা।