কোমরবিড রোগীদের জন্য মডার্নার ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর: গবেষণা
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও কিডনি রোগসহ কোমরবিড রোগীদের জন্য মডার্না ও ফাইজারের মতো এমআরএনএ ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, এসব রোগীদের কোভিশিল্ডের চেয়ে মডার্নার ভ্যাকসিনে অ্যান্টিবডির মাত্রা প্রায় দ্বিগুন বেশি এবং অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বকালও বেশি থাকে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ফলে দেহকোষ নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে তোলে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক ২ ডোজ নেওয়া ১০০ জন কোমরবিড রোগীর ওপর মডার্নার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালান।
গবেষণাটিতে এনজাইম লিংকড ইম্যুইনোসরবেন্ট অ্যাসে (ইএলআইএসএ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর ১৮ জনে ১৪ জন রোগীর দেহে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবডির ছিল।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ছিল ৭২ জন, নারী ২৮ জন। তাদের সবার বয়স ৫০-এর বেশি।
ডা. আশরাফুল এর আগে অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়া এক হাজার জনের ওপর গবেষণা করেছেন। ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেওয়ার পর তাদের দেহে শতভাগ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫০ জন ছিলেন কোমরবিড রোগী। তাদের দেহে অ্যান্টিবডি ঘনত্বের মাত্রা ছিল ৬-৮।
"কোমরবিড রোগীদের শরীর দুর্বল হওয়ায় কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়াদের দেহে কম অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ছিল। তবে মডার্নার ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি ছিল,"
"কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বও বেশিদিন হবে না,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন ডা. আশরাফুল।
গত ১৩ জুলাই দেশে মডার্নার টিকাদান শুরু হয়, এখন পর্যন্ত দেশে ৫৫ লাখ ডোজ মডার্নার ভ্যাকসিন এসেছে। প্রায় ২৬ লাখ মানুষ মডার্নার প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এরমধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ২৪ লাখ মানুষ।
বর্তমানে ১০ লাখ ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন মজুদ আছে, শিগগিরই আরও ৫০ লাখ ডোজ দেশে আসবে।
ডা. আশরাফুল বলেন, শুধু উপহার হিসেবে বা কোভ্যাক্সের আওতায় এমআরএনএ ভ্যাকসিন আসছে। এসব ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষকে না দিয়ে কোমরবিড রোগীদের দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেকটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন সিনোফার্মও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দিতে পারে। একারণে সুস্থ ও তরুণদের এ ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।
ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিনে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো বীজাণুর মৃত কণা ব্যবহার করা হয় ও গবেষণাগারে এর রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতা ধ্বংস করে ভ্যাকসিনে ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এমআরএনএ ভ্যাকসিন কোমরবিড রোগীদের মধ্যে ভালো কাজ করে এটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। তবে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি এখনো,"
"আমাদের দেশে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ঘাটতি আছে। একারণে, ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে ভ্যাকসিনই আছে, তা দেওয়া উচিত। কারণ তাদের মধ্যেই মৃত্যুহার বেশি।"
গত ৭ ফেব্রুয়ারি কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন দিয়ে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে টিকাদান কর্মসূচির গতি বেশ কয়েকবার কমে যায়। পরবর্তী সময়ে দেশে সিনোফার্ম, ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন আসে।
এখন পর্যন্ত ২.২৪ কোটি মানুষ প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১.৪৮ কোটির বেশি মানুষ।