খুলনা করপোরেশনের ৬০৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/08/26/khulna_photo-01-26-08-21.jpg)
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬০৮ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে কেসিসির শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এই বাজেট ঘোষণা করেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটের রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৪ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৩৬৯ কোটি ১৯ লাখ ২৬হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৩.২০ শতাংশ।
বাজেট ঘোষণার আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান সিটি মেয়র।
ঘোষিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী বাজেট উল্লেখ করে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ বাজেটে নতুন কোনো করারোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ যেমন-মার্কেট, দোকানঘর, আয়বর্ধক স্থাপনা নির্মাণ ও করপোরেশন সীমানা সম্প্রসারণের মাধ্যমে করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বাজেটে নগরীর সড়ক ও ড্রেনেজ তথা জলাবদ্ধদতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যখাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীতকরণ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, এ বাজেটে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি নিয়মিত হচ্ছে তা মোকাবিলা, তার অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান সম্প্রসারণ করার দিক নির্দেশনা এ বাজেটে রয়েছে।
তিনি বাজেটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কেসিসির নিয়মিত ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিজনিত কারণে করপোরেশনের সংস্থাপন ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য রাজস্ব খাত থেকে এ বাজেটে ৫১ কোটি ৯৬ লাখ ৫০হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজস্ব খাত থেকে উন্নয়ন খাতে ৩৮ কোটি ৪৬লাখ ৫০ হাজার টাকা, অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও মশক নিধনের জন্য কঞ্জারভেন্সি খাতে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ বছর উন্নয়ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। উক্ত থোক বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ভেটেরিনারি খাতে ২৫ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নগরবাসীর জরুরি পানির চাহিদা মেটানোর জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে রূপান্তর করার জন্য ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া জনস্বাস্থ্য খাতে ১০ কোটি ২ লাখ টাকা, কঞ্জারভেন্সি খাতে ১৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ভেটেরিনারি খাতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবে।
সিটি মেয়র বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসির তিনটি প্রকল্পে ২০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা চলতি বছরে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। বর্তমান অর্থ বছরে এ প্রকল্পের জন্য ৭০ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসহ নতুন-পুরাতন রাস্তার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ অর্থ খুলনা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের কথা তুলে ধরা মেয়র বলেন, নগরীর দরিদ্র জনগণের উন্নয়নে বস্তি এলাকায় রাস্তা, ড্রেন,কালভার্ট,টয়লেট নির্মাণ ও উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক ও পুস্তক ক্রয়ের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরফলে নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় কেসিসি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া খুলনা শহরকে স্বাস্থ্যকর শহরে রূপান্তরের জন্য হেলদি সিটি খুলনা আরবান লিড প্রোগ্রাম (হু) প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সিটি মেয়র নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে আমাদের আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থ সংস্থানের জন্য একটি স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে কেসিসি শুধুমাত্র সরকারি বা বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। তাকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। এটা আজ সময়ের দাবি।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসির অর্থ ও সংস্থাপন কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আজম। এ সময় কেসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।