গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে একনেকের ২,২০৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ফাইভ-জি সেবা দিতে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলসহ দেশের সব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা যাবে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ হবে। ফলে চিকিৎসা, শিক্ষায় টেলি-ক্লাসরুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়া সবার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রায় পুরো অর্থ যোগান দেবে সরকার। মাত্র ৬০ কোটি টাকা দেবে টেলিটক। ২০২৩ সালের মধ্যে এর বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং একনেকের অন্য সদস্যরা শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় অংশ নেন।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
এ সময় জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। ৪-জি প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়াসহ ৫-জি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল নেটওয়ার্কের প্রস্তুতি শুরু হবে। এতে বিদ্যমান ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আধুনিক এবং শক্তিশালী হবে। নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ৫-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কম বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দ্রুতগতির মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ৩-জি ও ৪-জি প্রযুক্তিতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব দুর্বলতা রয়েছে, ৫-জি তা থেকে মুক্ত থাকবে।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে নতুন তিন হাজার বিটিএস সাইট তৈরি করা। এতে রুম, টাওয়ার, লক ইত্যাদি থাকছে। টেলিটকের নিজস্ব ৫০০ টাওয়ার এবং দুই হাজার ৫০০ টাওয়ার শেয়ারিং সাইট প্রস্তুত করা হবে। সেবা সক্ষমতা বাড়াতে ৩-জি ও ৪-জির বিদ্যমান দুই হাজার সাইটের যন্ত্রপাতির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। ফিক্সড ওয়্যারলেস এক্সেজ (এফডব্লিউএ) প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালতে ইন্টারনেট সেবা বাড়াতে পাঁচ হাজার এফডব্লিউএ ডিভাইস স্থাপন করা হবে। এমন বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে প্রকল্পে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ বলেন, "ঢাকা শহরের সব জায়গায় ৫-জি সেবা দিতে টেলিটকের আরেকটি প্রকল্প আসছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। দ্রুত সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হবে"।
এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, "জনকল্যাণে টেলিটকের গুরুত্ব অনেক। এ কারণে লোকসানী প্রতিষ্ঠান হলেও একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এতে বাজারও নিয়ন্ত্রণে থাকে"।
টেলিটকের এ প্রকল্পসহ একনেকের সভায় ৭৯৮৫.৫১ কোটি টাকার মোট ১০ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় পদ্মাসেতুর সঙ্গে সংযোগ রেখে ৫টি সড়ক প্রশস্ত করা হবে। সড়কগুলো হলোঃ ঢাকা মাওয়া সড়ক-তেঘরিয়া শাপের বাজার ভায়া মোল্লাটহাট, জিজিরা-কোন্ডা ভায়া মিরেরবাগ বাজার-বেয়ারা বাজার-বনগ্রাম-জিন্দাপীর মাজার সড়ক, রুহিতপুর জিসি-বালুয়ারটেক-ঢাকা মাওয়া সড়ক, ঢাকা মাওয়া- খেজুরবাড় সড়ক, এবং চুনকুঠিয়া অডিটোরিয়াম-পাকা চিতা-দিঘিরপার-আব্দুল্লাহপুর বিশ্বরোড ভায়া গৈস্তা সড়ক।
প্রকল্পটি চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মার্চ ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বাড়াতে ৬৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, পূর্ব ইউরোপসহ পুরো ইউরোপের অনেক দেশে মুক্তিযুদ্ধের দলিল থাকতে পারে। এগুলো খুঁজে বের করে সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। একানেকের সভা সদস্যরা সোলার পার্কটি শেখ হাসিনার নামে নামকরণের প্রস্তাব দিলেও, প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন।
এদিকে ৮৬১ টাকা ব্যয়ে রংপুরের জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলী ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন প্রকল্পও একনেকের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর সড়ক জোনের আওতাধীন ৮টি সড়ক বিভাগের ২৬টি বিদ্যমান বেইলী সেতু ও ২৪টি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতুসহ মোট ৫০টি সেতু এবং ১৬টি কালভার্ট প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে টেকসই ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ সব বেইলী সেতু ও বড় সেতু চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, সেতু থেকে টোল আদায়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ টোল সরকারি তহবিলে জমা হবে এবং সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের 'পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়', কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, বাগেরহাট-রামপাল-মংলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন, উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (সংশোধিত) এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।