চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারে ফাটল: উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করলেন মেয়র
নকশা ও নির্মাণে কারিগরী ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে (এম এ মান্নান ফ্লাইওভার) ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) ফ্লাইওভার পরিদর্শন করে তিনি এ কথা বলেন।
প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, "মূলত দুটি কারণে ফ্লাইওভারে ফাটল দেখা দিতে পারে। ডিজাইন ফেইলিয়র অথবা কন্সট্রাকশন ফেইলিয়র। যে ফেইলিয়রই হোক, মূলত ওভারলোডেড গাড়ি চলার কারণে এমনটা ঘটেছে।"
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমি এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ম্যাক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারের এ অংশটি মূল নকশায় ছিল না। ফ্লাইওভার নির্মাণের চার বছর পর আরাকান সড়কমুখী এই র্যাম্পটি যুক্ত করা হয়। এ কারণে নির্মাণ ত্রুটি হতে পারে।"
এ সময় প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্যকে সমর্থন করে চসিক মেয়র রেজাউল করিম বলেন, "এই ফ্লাইওভারটি সিডিএ নির্মাণ করেছে, আমরা দেখভাল করছি। সাধারণভাবে দেখে মনে হচ্ছে নির্মাণে ত্রুটি আছে। ইতোমধ্যেই আমরা সড়কটি বন্ধ করে দিয়েছি। এ বিষয়ে সিডিএ-কে চিঠি দেওয়া হবে, তারা সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।"
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্মাণের চার বছর পর ফ্লাইওভারে আরাকান সড়কমুখী একটি র্যাম্প যুক্ত করেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম। র্যাম্প ব্যবহার করে নগরের মুরাদপুর থেকে আসা গাড়িগুলো চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের দিকে একমুখী চলাচল করে। পরে এই ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস মুঠোফোনে বলেন, 'ফ্লাইওভারটি আগের চেয়ারম্যানের সময় তৈরি করা হয়েছিল। তাই এ বিষয়ে কথা বলা যাচ্ছে না। আমি ঢাকায় এসেছি, চট্টগ্রামে গিয়ে পিলারগুলো পরীক্ষা করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, "ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ফ্লাইওভারে ফাটল দেখা দিয়েছে।"
তবে ফ্লাইওভার সুরক্ষায় সিডিএর অবহেলা আছে দাবি করে চসিক মেয়র রেজাউল করিম বলেন, "এর আগেও এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গিয়ে গার্ডার ধসে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বলা হচ্ছে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ফ্লাইওভারে ফাটল এসেছে। কিন্তু ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল রুখতে হাইট ব্যারিয়ার রাখার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি।"
এদিকে ফ্লাইওভারে ফাটলের খবরে বহদ্দারহাট এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় আপাতত দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা নেই। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের কম্পনে ফ্লাইওভারের কোনো সমস্যা হবে না।"
এদিকে ফ্লাইওভার বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ফ্লাইওভারের দুই পাশের সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট; দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।