গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ মামলা: নাইকোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়
সুনামগঞ্জের ছাতকে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের বহুল আলোচিত ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে চলা মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে নাইকোর দাবি করা পাওনা বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে না।
বিদ্যুৎ, জালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রোববার দুপুরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ বিষয়ে দেওয়া রায়ে নাইকোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত- ইকসিড।
তিনি আরও বলেন, 'নাইকোকে দায়ী করে এবং তাদের অভিযুক্ত করে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ যুগান্তকারী এ রায় দেওয়া হয়। নাইকো দক্ষতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং পেট্রোলিয়াম শিল্পে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন।'
এই রায়ের ফলে নাইকোর দাবি করা পাওনা বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে না। অন্যদিকে, ব্লক ৯ বা কুমিল্লার বাঙ্গুরায় নাইকোর সম্পত্তিও বাংলাদেশ নিয়ে নিতে পারবে বলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরও বলেন, ক্ষতিপূরণ বাবদ বাংলাদেশ নাইকোর কাছ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে দরপত্র ছাড়াই ছাতকসহ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য নাইকো বাংলাদেশ সরকারকে একটি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে তিনটি নির্দেশনা দেয় জ্বালানি বিভাগ।
ওইসব নির্দেশনায় বলা হয়, বাপেক্স ও নাইকো যৌথভাবে সমীক্ষা করে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র নির্ধারণ করবে। এরপর আহ্বান করা হবে উন্মুক্ত দরপত্র। সেখানে কেউ নাইকোর চেয়েও আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিলে তারা গ্যাসক্ষেত্র ইজারা পাবে।
ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার সুযোগ নেই বলে তখন মত দেয় বাপেক্স। কারণ সেখানে কোনো গ্যাসই তোলা হয়নি। অন্যদিকে, ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা যায় বলে মত দেয় তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট। সেই মত আমলে নেয় তৎকালীন সরকার।
এরই প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স চুক্তিবদ্ধ হয়। গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খননকালে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে মজুদ গ্যাস পুড়ে যাওয়ার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয় পাশাপাশি আশপাশের সম্পদের।
এই ঘটনায় নাইকোর কাছে পেট্রোবাংলা ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও কানাডিয়ান কোম্পানিটি তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০০৭ সালে ওই ক্ষতিপূরণ আদায়ে নাইকোর বিরুদ্ধে স্থানীয় নিম্ন আদালতে মামলা করে পেট্রোবাংলা।