তিন পার্বত্য জেলা: দুর্গম এলাকায় টিকা পৌঁছাতে চিন্তিত স্থানীয় প্রশাসন!
কোভিড-১৯ অতিমারি প্রতিরোধে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও টিকা কার্যক্রম চলছে। দেশের সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সরকার বয়সসীমা কমিয়ে আনা, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। তবে প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তিন পার্বত্য জেলার মানুষের টিকাদান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, টিকা কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) বিভাগ। বিভাগটির সর্বশেষ কোভিড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের ৬৪ জেলার টিকা প্রদানের তালিকায় পেছন থেকে শীর্ষ দশে রয়েছে পার্বত্য তিন জেলা।
দেশের অপরাপর জেলাগুলোর তুলনায় জনসংখ্যা কম হওয়ায় পরিমাণের দিক থেকে টিকা কম প্রদান হয়েছে এই তিন জেলায়। পার্বত্য তিন জেলার জনসংখ্যা কম হলেও আয়তনে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় বড়। তবে পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। এখানকার প্রতিটি উপজেলাতেই কিছু কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখানে জেলা শহর থেকে পৌঁছতে দুইদিনেরও বেশি সময় প্রয়োজন হয়।
পার্বত্য জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর শহরাঞ্চলের পরিসর ছোট এবং প্রশাসনের সচেতনতায় টিকা গ্রহণের হার সন্তোষজনক। যে কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে উন্নত এলাকার মানুষ টিকা গ্রহণে এগিয়ে রয়েছে। তবে দুর্গম এলাকায় টিকাদান নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দুর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি টিকা কার্ড প্রিন্টিংজনিত জটিলতাও রয়েছে। তাছাড়া ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধনে দুর্গম এলাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন অনেকে। ফলে এখনো পর্যন্ত দুর্গম এলাকার মানুষের টিকা গ্রহণের হার শূন্যের কোটায়।
রাঙামাটিতে ১০ উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় নৌপথ। যোগাযোগ কোনও কোনও অংশে এতটাই দুর্গম যে এখনও উপজেলা সদরে আসতেই কিছু গ্রাম থেকে দেড় থেকে দুদিন লাগে। বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার এই দুর্গম এলাকার মানুষ কী করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের সুবিধার আওতায় আসবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী বলেন, "টিকা যে তাপমাত্রায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে যদি ওইসব দুর্গম এলাকায় নিতে হয় তাহলে নেওয়া সম্ভব কিনা সেটি স্বাস্থ্য অধিদফতর বুঝবে। আমিও চাই ওই সব এলাকার মানুষ টিকার আওতায় আসুক"।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, "আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পার্বত্য দুর্গম এলাকাগুলো। কারণ জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে প্রতিটিতেই কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে। যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ঠিক রেখে টিকা পরিবহন ও টিকাদান কঠিন হয়ে পড়বে। এরপরও গণ টিকাদান ক্যাম্পেইন কর্মসূচীতে প্রতিটি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে শতভাগ মানুষকে টিকাদানের টার্গেট করা হয়েছে"।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূপুর কান্তি দাশ বলেন, "পাহাড়ি দুর্গম এলাকাগুলোর মানুষদের নিবন্ধন ও টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ডোর-টু-ডোর পদ্ধতি ছাড়া উপায় নেই। এজন্য আমরা প্রতি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড করে টিকাদানের আওতায় আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি"।
বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অংসুইপ্রু মারমা বলেন, "বান্দরবানের ৭টি উপজেলার মধ্যে কিছু এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। বান্দরবান শহর থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা থানচির রেমাক্রি ও তিন্দু এলাকায় পৌঁছতে দুই দিন সময় লেগে যায়। কারণ এসব এলাকায় পায়ে হাঁটা ছাড়া কোন যানবাহন নিয়ে যাওয়া যায় না। ফলে তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসব দুর্গম এলাকার মানুষকে শতভাগ টিকার আওতায় আনা চ্যালেঞ্জ হবে"।
তিন পার্বত্য জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ১ আগস্ট পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৫২ হাজার ৫৯৯ জন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে এবং ২৪ হাজার জন্য প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছে। খাগড়াছড়িতে ৬৮ হাজার মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে। এই জেলায় প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে ৭ হাজার মানুষ। এছাড়াও বান্দরবান জেলায় ১ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭২১ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬ জন সিনোফার্মের প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে মাত্র ৮৩ জন মানুষ।