দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আশঙ্কাজনক মাত্রায় সংক্রমণ বাড়ছে বাংলাদেশে
সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় মহামারির সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, পাকিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশে নতুন শনাক্তের সংখ্যা পড়তির দিকে।
বিপুল জনসংখ্যাকে গণহারে টিকাকরণেও দেরি করেছে বাংলাদেশ। এপর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে বা দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ২.৬ শতাংশ মানুষ- পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় যা চতুর্থ সর্বনিম্ন। বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত প্রদানকারী ওয়েবসাইট আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সাইটটি নানা দেশের সরকারের মহামারি ও টিকাহার সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করে।
সূত্রটির প্রদত্ত তথ্যানুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বা ৪৭.২৩ শতাংশ নাগরিকের সম্পূর্ণরূপে টিকাকরণ হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে, ৭.৬১ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শ্রীলংকা।
অন্যদিকে, মহামারিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর শিকার ভারত মোট জনসংখ্যার ৫.৮৭ শতাংশকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা নিয়েও এ অর্জন করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি।
৩.৪৮ শতাংশ নাগরিককে পূর্ণাঙ্গ টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসায় ভারতের পর চতুর্থ শীর্ষ স্থানে রয়েছে নেপাল।
আর দুই ডোজ টিকাদানে পিছিয়ে থাকাদের মধ্যে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ভুটান। তার আগের অবস্থানে যথাক্রমে আছে আফগানিস্তান (দশমিক ৫৬ শতাংশ), পাকিস্তান (২.০১ শতাংশ) এবং বাংলাদেশ (২.৬ শতাংশ)।
তবে যে গতিতে বাংলাদেশ টিকাদান শুরু করেছিল- তা ধরে রাখা সম্ভব হলে আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে পুরোপুরি টিকা দেওয়া যেত।
চলতি বছরের গোঁড়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তথ্যের রেখাচিত্রে বাংলাদেশের সংক্রমণ হার কমে আসলেও, মার্চের পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব।
পরিসংখ্যানের এ তথ্যানুসারে, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে গত ১৩ মে পর্যন্ত টানা কেস বৃদ্ধির ঘটনা দেখা গেছে; যাকে বাংলাদেশে মহামারির তৃতীয় ঢেউ বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর এ তরঙ্গেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১৮ দিনেই সবচেয়ে বেশি বা এক লাখ ৯০ হাজার ৭৩১ জন নতুন আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়। একইসময়ে মারা গেছেন ৩,৩৯১ জন। এর আগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর মাস ছিল এপ্রিল, কিন্তু জুলাই শেষ হওয়ার আগেই প্রাণহানিতে এপ্রিলকে ছাড়িয়ে যায়।
দক্ষিণ এশিয়ার সংক্রমণ প্রবণতা:
চলতি বছরের পহেলা জুনে বাংলাদেশে শনাক্তকৃত কেস সংখ্যা ছিল ১,৭৬৫। এসময় সংক্রমণ হার বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে মাত্র এক মাসের বেশি সময়ের ব্যবধানে গত ১২ জুলাই নাগাদ সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের তথ্য জানানো হয়। সেদিন মোট ১৩,৭৬৮ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হন। এরপর টেস্টের পরিমাণ কম হওয়ায় গত ১৭ জুলাই নাগাদ দৈনিক সংক্রমণ ৮,৪৮৯ জনে নেমে আসে, তবে এই সংখ্যা ১৮ জুলাই (রোববার) আবার বেড়ে ১১,৫৭৮ জনে উন্নীত হয়।
সংক্রমণ বাড়ায় দেশে সুস্থতার হারও কমেছে। ১ জুনের সাড়ে ৯২ শতাংশ থেকে তা ১৮ জুলাই নাগাদ ৮৪.৪ শতাংশে নেমে আসে।
অন্যদিকে, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উৎপত্তিস্থল ভারতে চলতি বছরের ১ জুন এক লাখ ৩২ হাজার ৮৮টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হলেও; গত ১ জুলাইয়ে তা দ্রুত ৪১,১৫৭- এ নেমে আসে।
শনাক্তের সংখ্যা কমছে নেপালেও, ৩ জুন ৫,৮২৫ জন শনাক্ত হলেও গত ৭ জুলাই তা ১,৩১০- এ নামে।
একই উন্নতির চিত্র শ্রীলংকাতেও। গত ৪ জুন যা ৩,৪১০ হলেও- ১৭ জুলাই ছিল ১,৪৫২ জন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবার আগে কোভিড-১৯ মুক্ত হওয়া ভুটানে এপর্যন্ত মাত্র দুজন মারা গেছেন।
মালদ্বীপে গত ১৭ জুলাই নাগাদ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ১০০- এর নিচে নেমে আসে। এর আগে ১ জুন ৭৬৮ জন শনাক্ত হয়েছিল।
খুব ধীর গতিতে বাড়তে থাকলেও পাকিস্তানে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা তুলনামূলক নিম্ন অবস্থানে রয়েছে।
গত মাস জুড়ে সংক্রমণ সংখ্যাবৃদ্ধি লক্ষ্য করে যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তান। গত ১৬ জুনে সর্বোচ্চ ২,৩১৩ জনের দৈনিক সংক্রমণ ও ১০১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তবে গত ১৭ জুলাই নাগাদ দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা কমে ৮৮৭ জনে নেমে আসে।