দুই মাসে খাবারের খরচ ২০ কোটি টাকার খবর সঠিক নয়: ঢাকা মেডিকেল পরিচালক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী 'চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের খাবার খরচবাবদ ২০ কোটি টাকা'- এই বক্তব্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও বানোয়াট বললেন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
বুধবার (১ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এই ২০ কোটি টাকা প্রকৃতপক্ষে কোথায় ব্যয় হয়েছে তার হিসাবও সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে নাসির উদ্দিন বলেন, গত দুই মাসে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আনসার সদস্যসহ মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জন। ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী, তারা এক সপ্তাহ করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করার পর পরবর্তী তিন সপ্তাহ আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এ হিসাবে প্রত্যেককে ১ মাস করে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে হয়। সে হিসাবে এক মাসে ২ হাজার ২৭৬ জন হোটেলে অবস্থান করেন।
খরচের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রোস্টারের হিসাবে এক মাসে ২ হাজার ২৭৬ জনের জন্য একমাসে হোটেলে থাকা- খাওয়া বাবদ খরচ হয়েছে ভ্যাট ছাড়া ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। আর ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ খরচ পড়েছিল ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ টাকা।
চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বরাদ্দের হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য বিআরটিসির চারটি দ্বিতল বাস ভাড়া করা হয়। এক মাসে বাস ভাড়া ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে পরিবহন ব্যয় প্রায় ১ কোটি টাকা।
হিসাব করে দেখা গেছে, পরিবহন ব্যয়, হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ দুই মাসে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
পরিচালক আরও বলেন, এক মাসের ব্যয় হিসাব করে দুই মাসে আবাসিক হোটেল ভাড়া, দৈনিক তিন বেলা খাবার এবং যাতায়াত ভাতাবাবদ সম্ভাব্য ব্যয় ২৬ কোটি টাকা হিসাব ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে হোটেল ভাড়া ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, খাবার খরচ বাবদ সাড়ে ৫ কোটি, পরিবহন বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা এখনও কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়নি।
কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিকিৎসকদের এক মাসের খাবার খরচ বাবদ ২০ কোটি টাকা শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা মে-জুন মাসের বাজেট ২০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় সেই টাকা ছাড় করেছে। সেই টাকা নিয়ে কথা উঠছে।
পরিচালক বলেন, ২০ কোটি টাকার মধ্যে হোটেলে থাকা, খাওয়া ও যাওয়া-আসার খরচও অন্তর্ভুক্ত।
হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মহামারীর এ দুর্যোগকালীন জীবন ঝুঁকি নিয়ে করানো রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এর পরও এ ধরনের উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সংবাদ আমাদের ব্যথিত করেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী 'চিকিৎসকদের এক মাসের খাবার খরচ ২০ কোটি টাকা' শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় সম্প্রতি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সোমবার জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্ন তুলে বলেন, এক মাসে খাবার খরচ ২০ কোটি টাকা কী করে হয়? বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ২০ কোটি টাকা খরচের ব্যাখ্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিল্লাল আলম বলেন, সংবাদ মাধ্যমে চিকিৎসকেরা এক মাসে ২০ কোটি টাকার খাবার খেয়েছেন এই প্রচারে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি হয়, তার সঙ্গে চিকিৎসকরা যুক্ত নন। তারাও চান এসব দুর্নীতির তদন্ত হোক, প্রতিকার হোক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, তাঁরা কোভিড রোগীদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক, নার্সসহ সব শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে খোঁজ নিতে বলেন।