দেশের মানুষের সেবায় সৌদি থেকে এসে খুন হলেন চট্টগ্রামের চিকিৎসক
ডা. মো. শাহ আলম (৫৮)। সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ছিলেন। ভালোবেসে দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বিলাসী জীবন ছেড়ে ফিরে আসেন জন্মভূমি বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের কুমিরাতে নিজ এলাকায় চালু করেন বেবী কেয়ার নামে স্বল্প খরচের একটি হাসপাতাল। নিজ এলাকায় হাসপাতাল খুললেও প্রতিদিন নগরীর চান্দগাঁও বাসা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এ হাসপাতালের দেখভাল ও নিয়মিত চেম্বার করতেন তিনি। দেশের মানুষকে ভালোবেসে কাজ করে গেলেও, বিপরীতে অকালেই হারাতে হলো নিজের প্রাণ। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন তিনি।
শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে কুমিরা ঘাটঘর এলাকার বাইপাস সড়কের পাশ থেকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। পরে সনাক্ত করার পর জানা যায়, সেটি ডা. শাহ আলমের লাশ। তিনি ছোট কুমিরা এলাকার মৃত আজিজুল হক মাষ্টারের ছেলে। দুই সন্তানের জনক তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় নির্মাণ করেন বেবী কেয়ার হাসপাতাল। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু হয়। প্রতিদিনের মত রোগী দেখে রাত ৯টার দিকে চেম্বার থেকে গাড়ি যোগে চট্টগ্রাম শহরের নিজ বাসায় যাচ্ছিলেন মোঃ শাহ আলম। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা দুষ্কৃতিকারীরা তাকে খুন করে সড়কের পাশে রেখে পালিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, উপজেলার বড় কুমিরা ফেরিঘাট সংলগ্ন বাইপাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সকালে এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী সীতাকুন্ড থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
সীতাকুন্ড মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম শেখ বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ধারণা করেছিলাম সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিটি মারা গেছে। কিন্তু আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর লাশ দেখে মনে হয়েছে তাকে কেউ খুন করে পালিয়ে গেছে। ব্যক্তিটি দুর্বৃত্তের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আমরা সিআইডিতে খবর দিলে তারা এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কোন মামলা হয়নি এখানো।”
লাশের সনাক্তকারী কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ চৌধুরী বলেন, “কুমিরা হাইওয়ে সড়কে পাওয়া লাশটি ডা. শাহ আলমের। তিনি সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এলাকার মানুষ সেবা দেওয়া জন্য ছোট কুমিরা বাজারে বেবী কেয়ার নামে ক্লিনিক খুলে ছিলেন। রাতে চেম্বার থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় যাওয়ার পথে তাকে খুন করে রাস্তায় ফেলে যায়।”
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে চেম্বার বন্ধ করে নিহত ডাক্তার লোকাল একটি মিনিবাসে করে চট্টগ্রামের বাসায় যাচ্ছিলেন। চেম্বারের কর্মচারীরা তাকে ওই বাসে তুলে দেন। বাসটিতে ১০ থেকে ১৫জন যাত্রী ছিলো।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ডা. শাহ আলম। ১৯৯৮৩ সালে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি।
তার সহপাঠী বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি মুজিবুল হক খান বলেন, “ডা. শাহ আলম সহজ সরল ও মহৎ প্রকৃতির লোক। ছোট বেলা থেকেই তার ছিল গ্রামের মানুষদের সেবা করা। তাই সৌদি আরবের বিপুল অংকের টাকার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে দেশে এসেছিলেন গরীব, অসহায়দের সেবা করতে। নিজের দুর্বৃত্তদের কাছে হত্যার শিকার হলেন। এ ধরণের হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকলে মেধাবী ও সৎ লোকেরা দেশের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসবে না।