নারায়ণগঞ্জে ১৫ চিকিৎসকসহ ৯০ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত
করোনাভাইরাসের হটস্পট নারায়ণগঞ্জে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ১৫ জন চিকিৎসকসহ ৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই আইসোলশনে রয়েছেন। আবার কয়েকজন সুস্থ হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স করো না আক্রান্ত হওয়ার পেছনে রয়েছে তথ্য গোপন করে রোগীদের ডাক্তারের কাছে এসে চিকিৎসা নেওয়া, সঠিক সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত নিরাপত্তা পোশাক পিপিই, মাস্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ না করাকেই দায়ী করছেন বিএমএর সংশ্লিষ্টিরা।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ ৩শ' শয্যা হাসপাতালের ৬ চিকিৎসক, ৯ নার্সসহ মোট ৪২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে, ১শ' শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ মোট ১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন অফিসের সিভিল সার্জন, ফোকাল পার্সন, দুই চিকিৎসকসহ ৫ জন, বেসরকারি পলি ক্লিনিকের ৩ জন চিকিৎসকসহ মোট ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছে। ম্যাডি প্লাস হাসপাতালে ৩ জন, সিটি লাইফ হাসপাতালে একজন চিকিৎসকসহ ৩ জন অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আরও ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এই নিয়ে ১৫ জন চিকিৎসকসহ ৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের অধিকাংশই আইসোলসনে আছেন। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা মুক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসকদের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এবং জেলা করোনা ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক বিএমএ নেতা ডা.শাহনেওয়াজ তার চিকিৎসক মেয়ে ও মেয়ের জামাতা এরই মধ্যে করোনা মুক্ত হয়েছেন। পরপর তিন পরীক্ষার রিপোর্টে তাদের নেগেটিভ এসেছে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডাক্তার শাহনেওয়াজ জানান, রোগীরা তথ্য গোপন করছে এর সংখ্যা একেবারে কম, তবে যে রোগীর করোনা উপসর্গ নেই অন্যান্য সমস্য নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যায়। আসলে সে জানে না সে নিজে করোনায় আক্রান্ত। এ ক্ষেত্রে রোগীকে কিভাবে দায়ী করবো। আসলে এ মহামারি দুর্যোগের সময় সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে চিকিৎসকদের আক্রান্তের পরিমাণ কমে আসবে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা পিপিই ও সরঞ্জাম সংকট থাকলেও এখন পর্যাপ্ত মজুদ আছে। চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনা চতুর্থধাপে পাবলিক ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ার কারণে এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কিভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। তবে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, করোনা এপি সেন্টার হটস্পট নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসকরা প্রথম থেকেই সাহসিকতার সঙ্গে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পিপিই ও নিরাপত্তা সরাঞ্জাম সরকার সরবরাহ করেছে। আশাকরি সামনে এ আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমে আসবে।