নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য দেশের সর্ববৃহৎ অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প কেন ব্যর্থ
আশুলিয়া-মিরপুর বেড়িবাঁধ রোড ধরে হাঁটলে বেশ কিছু আকাশচুম্বী অট্টালিকা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প নামে পরিচিত দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প এটি।
এই সুউচ্চ ভবনগুলোতে একটি ফ্ল্যাট পাবার আশা করতে পারেন আপনিও। প্রকল্পের শুরুতে এখানে ফ্ল্যাটের জন্য মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, তা এখন আর নেই।
২০১১ সালে এই অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পটি হাতে নেয় রাজউক। ২০১৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে তারা।
২১৪ একর জমিতে তিনটি ব্লকে বিল্ডিং নির্মাণ শুরু করে কোম্পানিটি। ২৪০টি ১৬ তলা ভবনে ১৮ হাজার ৭৩২টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করে তারা। সেসময় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
বর্তমানে তিনটি ব্লকের মধ্যে, ব্লক 'এ'-এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। এই ব্লকের পরিকল্পিত ৭৯টি ভবনের মধ্যে রাজউক এ পর্যন্ত ৭৩টি ভবন নির্মাণ করেছে। অবশিষ্ট ৬টি ভবন বর্তমানে নির্মাণাধীন। এই ভবনগুলোতে ৫০৪টি ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের একটি ভবনে ৮৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনটি বেডরুম, একটি ডাইনিং রুম, সংযুক্ত বাথরুম সহ দুটি ড্রয়িং রুম রয়েছে এই ফ্ল্যাটগুলোতে।
উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোজাফফর উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তারা ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ফ্ল্যাট মালিকের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেছেন।
তবে, ২০১১ সালে নির্ধারিত পরিকল্পনার অনেক সুযোগ-সুবিধাই এখানে অনুপস্থিত। এখনও এই প্রকল্পে পাবলিক স্কুল, হাসপাতাল এবং বাজারের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়নি।
সেইসাথে রয়েছে ফ্ল্যাট মালিকদের নানা অভিযোগ। এমনকি এখানে যারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
টার্গেট গ্রুপ এবং বিলম্বিত প্রকল্প
উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসিক ফ্ল্যাট নিশ্চিত করা। কিন্তু, প্রকল্পের বর্তমান চিত্র ভিন্ন।
২০১৯ সালে প্রকল্পটির উপর একটি পর্যবেক্ষণকাজ চালায় ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশন (আইএমইডি)। সরকারি প্রকল্প পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য সরকারের শীর্ষ সংস্থা এটি।
ফ্ল্যাট মালিকদের আয় এবং আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ ফ্ল্যাট মালিক রয়েছেন মধ্যম আয়ের তালিকায়। অবশিষ্ট ৩২ শতাংশ ফ্ল্যাট মালিক রয়েছেন উচ্চ-আয়ের তালিকায়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি এই প্রকল্পের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক নয়। প্রকল্পের ফ্ল্যাটের দাম নিম্ন আয়ের লোকদের নাগালেরও বাইরে।
রাজধানী ঢাকায় মূলত মধ্যম ও উচ্চ আয়ের মানুষের আবাসনের তেমন কোনো সংকট নেই। শহরে প্রচুর পরিমাণে প্রাইভেট রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রয়েছে। ধনীদের সামর্থ্য অনুযায়ী রয়েছে প্রচুর ফ্ল্যাট।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "আমাদের বর্তমান সংকট হল নিম্ন আয়ের লোকদের আবাসন সুবিধা দেওয়া। নিম্ন আয়ের লোকদের সুবিধার নামে কর্তৃপক্ষ যথারীতি ধনীদেরকেই সেবা দিয়ে আসছে।"
শুরুতে এই প্রকল্পের প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা। অর্থাৎ, ১ হাজার ৬২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরে রাজউক ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৪ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, নির্মাণ ও প্রশাসনের খরচ মেটাতে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবেদনকারীরা যাতে রেডিমেড ফ্ল্যাট পায় সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই প্রকল্পে নিম্ন আয়ের লোকজন কেন ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না তা জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, "নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যই এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ৮০ লাখ টাকায় ১৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আর কোথায় পাবেন আপনি?"
"যখন কেউ এখানে ফ্ল্যাট কেনেনি তখন ধনীরা কিনেছে। এখনও ৮০০ ফ্ল্যাট খালিই পড়ে আছে। চাইলে যে কেউ কিনতে পারে এগুলো," বলেন তিনি।
আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় রাজউক কোনো বেসলাইন জরিপ বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করেনি। কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়ায় এই প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়েছে। তবে রাজউকের প্রকল্প পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের দাবি, তারা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছেন।
উল্লেখিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নির্ধারিত ব্যয় ৯ হাজার ৩০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে রাজউক। অর্থাৎ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। সেইসাথে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে তারা।
এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় অনেক আবেদনকারীই ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে বাধ্য হন। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদেরকে। নিজেদের বর্তমান আবাসস্থলে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি মাসিক ঋণের কিস্তিও দিতে হচ্ছে তাদেরকে।
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, বারবার প্রকল্প পরিচালক বদলানোর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোজাফফর উদ্দিন এই প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণকারী ১১ তম ব্যক্তি। রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত মোজাফফর উদ্দিনের জন্য প্রকল্প পরিচালকের ভূমিকা একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব।
মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়া বাড়ি
যেসকল ফ্ল্যাট মালিকদের নিজস্ব গাড়ি নেই তাদের বেশিরভাগই এলাকায় পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কোনো মার্কেট, সরকারি স্কুল বা হাসপাতাল না থাকায় তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, জামা-কাপড়, পড়ালেখা, স্বাস্থ্যসেবার জন্য সবসময় উত্তরা বা মিরপুর যেতে হয়।
ফলস্বরূপ, যাতায়াতের জন্য তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়।
প্রকল্পটির বাস্তবায়িত রূপ নিয়ে কথা হয় ফ্ল্যাট মালিক আব্বাস উদ্দিনের সাথে। ১৫ বছর কাতারে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
"বিদেশে এরকম প্রকল্পের কর্তৃপক্ষরা আগে স্কুল, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টারের মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে মানুষকে থাকার অনুমতি দেয়। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে পুরো উল্টোভাবে। যে কারণে ফ্ল্যাট মালিকদের প্রতিদিন ভুগতে হচ্ছে," প্রকল্পের ভেতরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বলেন আব্বাস।
মৌলিক সুযোগ-সুবিধার এই ঘাটতি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জানান প্রথমে শপিং কমপ্লেক্স বানিয়ে পরে মানুষকে থাকতে দেয়ার চিন্তা অস্বাভাবিক। মানুষ থাকতে শুরু করলেই মার্কেট স্থাপিত হবে বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
"মানব সভ্যতার ইতিহাস তা-ই বলে," নূরী বলেন।
সম্প্রতি বিআরটিসি প্রকল্প এলাকার জন্য চারটি বাস দিয়েছে। এগুলো সকাল সাড়ে সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে যায়। এরপর সারাদিন একটানা আর কোনো বাস থাকে না। বিআরটিসির বাসগুলো ১ নম্বর গেট থেকে ছেড়ে মতিঝিল পর্যন্ত যায় আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসে।
"রাজউক একটা ডেইলি শপ দিয়েছে প্রকল্পের ভেতর কিন্তু সেখানে সবকিছুর দাম অনেক বেশী। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হলেও আমাকে উত্তরা যেতে হয়। জামা-কাপড় কেনারও কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। এমনকি গরুর মাংস কিনতে হলেও আমাকে উত্তরা যেতে হবে," বলেন আব্বাস। "মার্কেট এখনও নির্মাণাধীন এখানে," যোগ করেন তিনি।
রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উজ্জামান প্রায় ৪০০ ফ্ল্যাট মালিকের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান প্রকল্প এলাকার ভেতর কোনো সরকারি প্রাইমারি স্কুল নির্মাণ করা হয়নি। এপর্যন্ত কেবল একটি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল স্থাপিত হয়েছে, তাও বিল্ডিং এর ভেতর একটি ফ্ল্যাটে এর কার্যক্রম চলে।
"স্কুলটি অনেক ব্যয়বহুল। এখানে ভর্তি ফি-ই ২৮০০০ টাকা। প্রকল্পের পাঁচ কিলোমিটারের ভেতর আর কোনো স্কুল নেই। এছাড়া সবচেয়ে কাছের স্কুল আছে দিয়াবাড়িতে," আব্বাস বলেন। "এখানে কোনো হাসপাতাল না থাকায় যেকোনো চিকিৎসার জন্য মানুষকে অন্য এলাকায় যেতে হয়।"
"আপনি যদি অটোরিকশায় উত্তরা যেতে চান তাহলে ৫০ টাকা করে যেতে আসতে মোট ১০০ টাকা খরচ হবে আপনার," জানান আব্বাস। 'আর যদি সিএনজি-অটোরিকশা নেন তাহলে খরচ হবে ৪০০ টাকা," দিয়াবাড়ির স্কুলে ছেলেকে পড়াতে যাওয়ার খরচ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন আব্বাস।
সুরমা বিল্ডিং এর এক ফ্ল্যাটে থাকেন সরকারি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
"আমার অফিস থেকে গাড়ি দেওয়ায় আমাকে কোনো পরিবহন সমস্যায় পড়তে হয় না। যাদের স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়ে আছে তাদের সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়," বলেন ইসলাম। তবুও আশেপাশে অনেক খোলা জায়গা থাকায় ঢাকার মধ্যে বসবাসযোগ্য সেরা স্থান বলে তিনি বিবেচনা করেন এই এলাকাকে।
"গুলশান-বারিধারাতেও আপনি এরকম থাকার ব্যবস্থা পাবেন না," বলেন ইসলাম।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এখানের ৮০ হাজারের মতো জনসংখ্যা হবে বলে জানান পরিকল্পনাকারী আদিল মোহাম্মদ খান। সেজন্য কম হলেও সেখানে ১৬টি প্রাইমারি স্কুল এবং ১০টি হাই স্কুল প্রয়োজন হবে যোগ করেন তিনি।
"৮০ হাজার জনসংখ্যার একটি জায়গা আসলে একটি শহরের সমান। এটা কোনো খেলো বিষয় না। প্রয়োজনীয় সহায়ক অবকাঠামো ছাড়া আপনি এসব বহুতল বিল্ডিং-এ মানুষকে থাকতে দিতে পারেন না," খান ব্যাখ্যা করেন। "এখানে মাত্র একটি ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইমারি স্কুল আছে এখন।"
প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার জন্য কিছু আনসার মোতায়েন করা হলেও ফ্ল্যাট মালিকরা এই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত।
বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট?
ফ্ল্যাট মালিকরা এই প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলোর অবস্থা নিয়েও নারাজ। লিফটগুলো প্রায়ই বিগড়ে যায়, দেওয়াল লিক করে, বাথরুমের ডিজাইনও সমস্যাপূর্ণ।
চামেলি-১ (১১-সি) বিল্ডিংইয়ের প্রেসিডেন্ট আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ফ্ল্যাটগুলোতে সমস্যার শেষ নেই।
তিনি অভিযোগ করেন যে বর্ষা মৌসুমে বিল্ডিংইয়ের দেয়ালগুল স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়, যার ফলে শেষ পর্যন্ত ঘরের ফার্নিচারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক বিল্ডিংয়ে প্লাস্টারও খসে পড়তে শুরু করেছে।
"এই যে এখন আমরা কথা বলছি, এই মুহূর্তেও আমার বিল্ডিংয়ের একটি লিফট কাজ করছে না," কামাল বলেন। তার দেওয়া তথ্য মতে, হঠাৎ করেই এক-তৃতীয়াংশ লিফট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। "আমি ঠিকমতো দরজা-জানালাও বন্ধ করতে পারি না, কেননা কয়েকটি ইতোমধ্যেই বেঁকে গেছে। আমার মনে হয় তারা (ডেভেলপার ও বিল্ডার) নির্মাণকাজে ভালো মানের কাঠ ব্যবহার করেনি।"
তিনি আরও জানান যে বেশ কয়েকটি ফ্লোরের টাইলসও উঠে এসেছে। পাশাপাশি, "শাওয়ার ফিট করা হয়েছে ঠিক কমোডের উপর। তাই গোসল করার সময় আপনি ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারবেন না। বাথরুমগুলোর ডিজাইন খুবই সমস্যাজনক।"
তিনি অভিযগ তোলেন, রাজুক এবং পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কার্যক্রম ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।
যখন এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয়, প্রকল্প পরিচালক বলেন, লিফটগুলো গত তিন বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। সরবরাহকারী এক বছরের জন্য লিফটের সার্ভিসিং করেছে, এখন ফ্ল্যাট মালিকদের দায়িত্ব সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিসিং করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা সেটি করে না।
"আমরা যখন ড্যাম্পিংসহ অন্যান্য অভিযোগ পাই, যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধানের চেষ্টা করি। আমার মনে হয় না হাজার হাজার ফ্ল্যাটের মাঝে এমন টুকটাক সমস্যা হওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক," প্রকল্প পরিচালক ব্যাখ্যা করেন।
শাওয়ার ও কমোডের ডিজাইন সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ ধরনের সমস্যার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন, এবং জানামাত্রই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কারা থাকছেন এখন?
কামাল উল্লেখ করেন, "২০০০ এর মতো পরিবার এই এলাকায় থাকছেন বর্তমানে। এদের মধ্যে ৮০০ ফ্ল্যাট মালিক আর বাকিরা ভাড়াটিয়া।"
পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বসবাসরত ৬৫ শতাংশ মানুষই ভাড়াটিয়া। এসব ভাড়াটিয়াদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানত উত্তরা-ভিত্তিক ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, বায়িং হাউজের কর্মকর্তা এবং ব্যাংকাররা। তাদের এখানে থাকার কারণ : ভাড়া তুলনামূলক বেশ সস্তা।
"এই প্রকল্পে আপনি একটি গোটা ফ্ল্যাট ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে পেতে পারেন। উত্তরায় একই ধরনের কোনো ফ্ল্যাটেড় ভাড়া হবে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা," বলেন বাড়ি মালিকদের নেতা নাসিরুজ্জামান।
রাজুক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে বলেন, "আসলে যা ঘটেছে তা হলো, কিছু উঁচু আয়ের মানুষজন এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং তারা বিশাল বিশাল জাঁকালো অ্যাপার্টমেন্টে থেকে অভ্যস্ত। তাই এসব ছোট ফ্ল্যাট তাদের পছন্দ হয়নি। এরপর তারা আমাদের দোষ দিচ্ছে এভাবে ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করার জন্য।
"আমরা এই ফ্ল্যাটগুলো বানিয়েছি দরিদ্রদের থাকার জায়গা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার পরিবর্তে ধনী লোকেরা এগুলো কিনে নিয়ে এখানে চলে এসেছে," নূরী যোগ করেন। "এটি সরকারের একটি সফল প্রকল্প। মেট্রোরেল চালু হবার পর সবগুলো ফ্ল্যাটই বিক্রি হয়ে যাবে। আমি যতজন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা অধিকাংশই খুশি।"
তিনি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে এই প্রকল্প এলাকায় ফ্ল্যাটের সংকট দেখা যাবে। ফ্ল্যাটের চাহিদা এখানে ক্রমশ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পে একটি সিঙ্গেল ফ্ল্যাটের দাম ইতোমধ্যেই ১ কোটিতে উঠে গেছে।