নিষেধাজ্ঞা না মেনে কৌশলে চলছে আন্তঃজেলা বাস
করোনা মহামারীর কারণে দেশব্যপী লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না পরিবহন মালিকরা। বাড়ি ফেরত যাত্রীদের টার্গেট করে নতুন কৌশলে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস। জেলা অভ্যন্তরে বাস চলাচলের সুযোগ নিয়ে দূরপাল্লার বাসগুলো 'পথ ভেঙ্গে' বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার সকাল ৮ টায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের বেতবুনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চট্টগ্রাম প্রান্তে পাহাড়িকা বাস সার্ভিসের বেশ কিছু গাড়ি পার্কিং করা আছে। একইভাবে কিছু গাড়ি পার্কিং করা আছে রাঙ্গামাটি প্রান্তে। রাঙ্গামাটি থেকে যাত্রী বোঝাই বাস এসে থামছে পুলিশ চেকপোস্টের কিছুদুর আগে। বাস থেকে নেমে যাত্রীরা পায়ে হেঁটে চেকপোস্ট পার হয়েই চড়ে বসছে আরেকটি বাসে। একই ভাবে বেশ কিছু পর্যটককেও বাস বদল করে রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এসময় হাইওয়ে পুলিশ বা চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করায় রোববার ১৮ জন পর্যটককে জরিমানা করা হয়েছে। এর পরেও পরিবহণ মালিকদের বেপরোয়া তৎপরতায় পর্যটকসহ যাত্রীদের ঠেকানো যাচ্ছেনা। আমি এখনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি, তারা ব্যবস্থা নেবেন।'
বাস যাত্রী অনিমেষ চাকমা বলেন, 'ছুটি শেষে কর্মস্থলে যাচ্ছি, রাঙ্গামাটিতে যাওয়ার সময় বাস পায়নি। তবে ঈদের পর থেকে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রাম বাস যাচ্ছে, তবে একটি বাস বদল করে। স্বাভাবিক সময়ে ১২০ টাকা ভাড়া হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা।'
পাহাড়িকা বাসের চালক মাইনুদ্দিন বলেন, 'আমরা অনুমুতি নিয়েই বাস চালাচ্ছি চট্টগ্রামের কোনো বাস রাঙ্গামাটি প্রবেশ করছেনা, আবার রাঙ্গামাটির বাসও চট্টগ্রাম যাচ্ছেনা। জেলার সীমানায় যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা পায়ে হেঁটে আরেকটি বাসে চড়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন।'
জানতে চাইলে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঈদে সবাই আনন্দ করলেও দূরপাল্লার বাস চালকদের হাঁড়িতে ভাত নেই। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই আমরা যাত্রী পরিবহণ করছি।'
রাউজান হাইওয়ে পুলিশের ওসি কামরুল আজম-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চট্টগ্রাম- রাঙ্গামাটি সীমান্তে আমাদের একটি চেকপোস্ট ছিলো, বর্তমানে সেটি নেই। বাস সার্ভিস গুলো যদি এভাবে যাত্রী পরিবহণ করে, তাহলে তারা নিশ্চিত ভাবেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করছেন।'
একইভাবে কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী থেকে দূরপাল্লার বাস প্রবেশ করছে চট্টগ্রামে। রোববার বিকেলে নগরে শাহ আমানত সেতু ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা সরেজমিনে ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, নগরের এসব প্রবেশ পথ দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরতে শুরু করেছে কর্মমুখী মানুষ। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেণের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসের চাপ ছিলো চোখে পরার মত। আবার যারা নানা কারণে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারেনি তাদেরও বাস স্টেশন গুলোতে ভিড় করতে দেখা গেছে।
আমির হোসেন নামে এক দোকান কর্মচারি জানান, তিনি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে বাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আজিজ নগর পুলিশ চেকপোস্ট পৌছান। এরপর কিছুদুর পায়ে হেঁটে কক্সবাজার গেট পার হলেও আবারও মিলছে বাস। এভাবে দুই ধাপে তিনি চট্টগ্রাম পৌছান।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাস পরিচালনা সংস্থ্যা সেন্টমার্টিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল মোহাম্মদ মঞ্জু বলেন, 'সরকার যদিও জেলার ভেতরে বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে, তারপরেও গাড়ি রাস্তায় নামালেই পুলিশ সমস্যা করছে। তাই বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ রেখেছি।'
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঈদে মানুষ বাড়ি গিয়েছে, এখন আবার যাচ্ছে বেড়াতে। আমরা এতো গাড়ি আটক করছি, রাখার জায়গা পাচ্ছিনা। তারপরেও মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছেনা। পরিবহণ মালিকরা সচেতন না হলে পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব না।'