নুসরাতের তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে: আদালত
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুকে নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ‘তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ’ বলে উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, এ ঘটনা বিশ্ব বিবেকে নাড়া দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ মামলার রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আলোচিত এই মামলার আসামি ১৬ জনের সবাইকেই মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, “নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। তার এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা।”
আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, “সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপীঠ। দুই হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী সেখানে অধ্যয়নরত। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলোকোজ্জ্বল ভূমিকায় কালিমা লিপ্তকারী এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।”
আসামিদের শাস্তির বিষয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “আসামিদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জিত করবে নিশ্চয়ই। তাই দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য।”
এছাড়াও এ ঘটনায় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে গাফলতি করেছেন বলেও আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন।
এ সময় আদালত তাকে তিরস্কার করেন।
উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার পরে বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে কয়েক দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পিবিআইয়ের লাগে ৩৩ কার্যদিবস।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।