পাবনার ‘ডিম দাদি’ রাবেয়া বেগম: অদম্য মনোবলের কাছে হার মেনেছে বার্ধক্য
কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় থাকলে জীবনে যে সাফল্য অনিবার্য তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের পৈলানপুন গ্রামের রাবেয়া বেগম। ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যের বোঝা না হয়ে থেকে, ৭০ বছর বয়সেও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম।
এ বয়সেও প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। ডিম বিক্রির টাকায় কিনেছেন পাঁচ শতক জমি, নির্মাণ করেছেন বসতঘর। দুই সন্তানকে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছেন।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে সকলের কাছে ‘ডিম দাদি' হিসেবে পরিচিত রাবেয়া বেগম কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে স্থাপন করেছেন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রাবেয়া বেগম জানান, খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় কৃষক আলিমুদ্দিনের সঙ্গে। বিয়ের পর একটি কন্যা সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। কিন্তু পাঁচ বছর পর ছয় মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা রাবেয়াকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান স্বামী আলিমুদ্দিন। সেই থেকেই শুরু তার জীবন সংগ্রাম।
স্বামী ছেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে দিশেহারা রাবেয়া গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুরু করেন পাউরুটিসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি। এর মাঝে জন্ম হয় পুত্র সন্তানের। দশ বছর এভাবে চলার পর ডিম বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রথমে হাঁস মুরগীর ডিম কেনেন। পরে চাটমোহর পৌর সদরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করেন। প্রতিদিন অন্তত ২০ কিলোমিটার রাস্তা খালি পায়ে হেঁটে তিনি ডিম কেনাবেচা করেন। এভাবেই একা সংগ্রাম করে অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলার পর বিয়ে দেন।
কিন্তু এতো কষ্ট করে সন্তানদের বড় করার পরেও সন্তানরা তার দেখভাল না করায় এই বৃদ্ধ বয়সে বয়ে চলেছেন নিজের জীবন তরী।
ভিক্ষাবৃত্তির প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি আমাদের ধর্মীয় মতে নিষিদ্ধ। যে কোন পরিশ্রম করে খাওয়া ভালো। আর আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারি একটা ব্যবসা করি।
চাটমোহর পৌর সদরের দোলবেদীতলার বাসিন্দা রনি রায় ও টুম্পা দাস জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে ডিম কেনেন। বাজার থেকে কিনতেই হয়, তাই ডিম দাদীর কাছ থেকে ডিম কেনেন তারা।
চাটমোহর এলাকার শাহিন রহমান বলেন, একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধা মানুষ কারো কাছে হাত না পেতে যেভাবে খাবার বিক্রি করছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি অনুপ্রেরণা। আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, রাবেয়া খাতুনের মতো সংগ্রামী নারী বর্তমান সমাজে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে একটা বয়স্কভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে তাকে একটি ঘর করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।