পূর্বাচলের আরেকটি অপব্যয়ী পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকারের সর্ববৃহৎ পরিকল্পিত জনপদ পূর্বাচল নিউ টাউনে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সিস্টেমের পূর্ব-পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও তহবিল সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পূর্বাচলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
ফলে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ইন্টারনেট সংযোগের তারগুলো স্থাপিত হচ্ছে মাটির উপরে (ওভারহেড)।
সম্প্রতি, শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশের খুঁটি থেকে ঝুলন্ত তারগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাছাড়া, ইতোমধ্যেই রাজধানী এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর কিছু জায়গায় এসকল তার ভূগর্ভে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ অবস্থার মাঝেই পূর্বাচলের মত একটি প্রকল্পে স্থাপিত হচ্ছে ওভারহেড ক্যাবল সংযোগ।
এদিকে রাজউকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, "আমাদের খুবই ব্যয়বহুল একটি ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। ফলে একটি পৃথক বাজেট তৈরি করে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে রাজউক।"
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ যদি ওভারহেড ক্যাবল বসানোর পর ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থা তৈরি করে তাহলে সেক্ষেত্রে করদাতাদের অর্থের অপচয় হবে। উল্লেখ্য, প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় ১৩৫ শতাংশ বেড়ে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পটি এখনো নির্মাণাধীন থাকায় তাদের নিজস্ব পরিকল্পনাটি সংশোধন করা উচিত।
উল্লেখ্য, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ছয়টি কোম্পানির মধ্যে একটি ডেসকো, এবং ইতোমধ্যেই তারা নিজেদের ১৩২ কিলোভোল্ট সরবরাহ লাইন স্থানান্তর করেছে।
তবে ডেসকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী জানান, যারা ইতোমধ্যেই ঐ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছে তাদেরকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ওভারহেড ক্যাবল বসানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, "আমরা সেখানে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সিস্টেম তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে আমাদেরকে ওভারহেড ক্যাবল বসানোর নির্দেশ দেয় রাজউক"।
এর আগে, পূর্বাচল প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বিস্তারিত নকশার জন্য বাইকসান পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে ২০১৭ সালে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) চালায় ডেসকো। এলাকাটিতে একটি ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করেছিল তারা।
সেসময় এ কোম্পানিকে তখনকার বাজেটের মধ্যে একটি ওভারহেড সিস্টেম স্থাপন করার নির্দেশ দেয় রাজউক। কিন্তু, লাইন বসানোর জন্য এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা দিয়েছে তারা। এ বিষয়ে রাজউকের এক সূত্র জানায়, লাইন বসানোর জন্য তারা মাত্র ১৬০ কোটি টাকা মজুদ রেখেছে।
এদিকে ডেসকো সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে মোট ৩০টি সেক্টরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় বিদ্যুতের তার স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকি এলাকায় খুঁটি তৈরি করা হচ্ছে।
তাছাড়া, ৬,১৫০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি ২৫ হাজারেরও বেশি আবাসিক প্লট সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার পর পূর্বাচলে ১,১০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে।
ডেসকোর পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জুলফিকার তাহমিদ বলেন, স্থাপন করা অবকাঠামোতে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে। তবে, বর্তমানে এলাকাটিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সর্বোচ্চ পরিমাণ মাত্র ৫ মেগাওয়াট।
ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ছয় হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব
গত বছর একটি ভূগর্ভস্থ পাওয়ার সাপ্লাই প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের তৈরি একটি প্রস্তাব পাঠায় ডেসকো।
কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি সে প্রস্তাবটি তখন বিবেচনাধীন থাকার পরেও সাম্প্রতিক কোভিড সীমাবদ্ধতা এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা এখন আটকে রয়েছে।
পূর্বাচল শহরের ওভারহেড ইন্টারনেট সরবরাহ
বিদ্যুৎ সরবরাহের তারগুলোর পাশাপাশি পূর্বাচলে ইন্টারনেটের তারগুলোও বসানো হচ্ছে ওভারহেড সিস্টেমে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের মহাসচিব এমদাদুল হক বলেন, ইউটিলিটি টানেলের স্থায়ী কাঠামো (ইউটিলিটি ডাক্ট সিস্টেম) ছাড়া ভূগর্ভস্থ ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, "ভূগর্ভস্থ ইন্টারনেট এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি ইউটিলিটি ডাক্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে রাজউককে। এ ধরনের অবকাঠামো ছাড়া, আমরা কীভাবে আমাদের তারগুলো মাটির নিচে স্থাপন করবো?"