পুলিশের বাধায় ছাত্রদলের সমাবেশ পণ্ড
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশ পণ্ড হয়েছে পুলিশি বাধায়।
রোববার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় তাদের।
একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় শুরু হয় দুই পক্ষের ধাওয়া পালটা ধাওয়া। তাদের সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনীক সাংবাদিকদের জানান, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি পালনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে প্রায় ৫০০ নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। নেতা-কর্মীরা বের হওয়ামাত্রই পুলিশ বেপরোয়া লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে। বিএনপি-ছাত্রদলের অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মামুন খান, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক করিম প্রধান ও ইডেন কলেজের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জান্নাত জাহান রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, ছাত্রদলের সমাবেশ করার অনুমতি ছিল না। কেউ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'এখানে সমাবেশ করার জন্য ছাত্রদল কোনো অনুমতি নেয়নি। গত রাতে হঠাৎ করে তারা সমাবেশ ডাকে। সকালে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে জড়ো হতে থাকে। প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানে সমাবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাদের অনুমতি ছিল না। আমরা সকালেও তাদের অনুমতি নিতে বলেছি। কিন্তু তারা অনুমতি না নিয়ে সমাবেশের চেষ্টা করে এবং প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইটের টুকরা ছোড়ে। তারা প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ৪০০-৫০০ জন কর্মীসহ সড়কে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে।'
এ ঘটনায় ছাত্রদলের কিছু কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আবুল জানান, 'সংঘর্ষে পুলিশের সাত-আটজন সদস্য আহত হয়েছেন । তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'
এ হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, 'প্রেসক্লাবের ভেতরে এত ইট নেই। এত ইট এলো কীভাবে? এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এর আগে, আজ (রোববার) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন শ্যামল বলেন, 'আমরা সকাল সাড়ে এগারোটায় বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়, প্রেসক্লাবের ভিতরেও এখানে দাঁড়াতে দিচ্ছে না আমাদের।'
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছি। বিএনপির মহাসচিব পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে ফোনও করেছিলেন, কিন্তু তারা আমাদের এখানে প্রতিবাদ করতে দিচ্ছে না।'
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন টিবিএসকে বলেন, "পুলিশের উপস্থিত নজিরবিহীন। আমরা জানি প্রেসক্লাবের সামনে কর্সসূচির কোন অনুমতি লাগে না। কিন্তু আমাদের অনুমতির দোহাই দিয়ে সরে যেতে বলা হচ্ছে, প্রেসক্লাবের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে, নেতা-কর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে আমরা যেকোন মূল্যে প্রোগ্রাম করব।"
ছাত্রদল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মুকিতুল নামে এক পুলিশ সদস্য নাকে আঘাত পেয়েছেন আর ঢাকা মহানগর পশ্চিমের ছাত্রদলের সভাপতি কামরুজ্জামান জুয়েল দাবী করেছেন, তার দলের ৬০ জনের অধিক ছাত্র আহত হয়েছেন।
পুলিশ বিক্ষোভ ঠেকাতে জল কামানও মোতায়েন করেছে।
উল্লেখ্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় সকাল সোয়া ১১টার দিকে। এর আগে সকাল ১০টার দিক থেকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাব এলাকায় সমাবেশের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে তারা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ।
একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে আশেপাশে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে, ও আশপাশে ভাঙচুর চালায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে।
প্রেসক্লাব এবং এর আশপাশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়েছিল।
শনিবার থেকেই সারাদেশে শিক্ষার্থী সংগঠনসহ সর্বস্তরের লোকজন লেখক মোশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। এসব বিক্ষোভ-মিছিলে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করারও দাবি উঠেছে।