বাজারে মিলছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পেস্ট
রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকার এক সুপারশপে মশলার ছোট একটি কৌটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন নাজনীন আক্তার নামে এক গৃহিণী। অবাক হয়ে বিক্রয়কর্মীর কাছে জানতে চাইলেন, 'সত্যিই কি এটা পেঁয়াজ বাটা? নাকি কেমিক্যালের মিশ্রণ?'
বিক্রয়কর্মী তাকে আশ্বস্ত করলেন, সত্যিই পেঁয়াজ বাটা। ঘরে পাটা-পুতায় বা ব্লেন্ডারে পেঁয়াজের মতো এটি একই জিনিস।
নাজনীন আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাসার পাশে হওয়ায় নিয়মিতই সুপারশপটি থেকে বাজার করছি, কিন্তু পেঁয়াজ রসুনের যে পেস্ট পাওয়া যাচ্ছে তা আগে খেয়াল করিনি। আজই চোখে পড়ল।'
নাজনীন নতুন ক্রেতা হলেও বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পেস্টের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং অনেকদিন ধরেই বাজারে বড়-ছোট বহু কোম্পানির বিভিন্ন মশলার গুড়া পাওয়া গেলেও পেঁয়াজ, রসুন ও আদার গুড়া বা পেস্ট নেই।
বিটিএম ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কোম্পানি এই পেস্ট বাজারজাত করে আসছে অনেকদিন থেকেই।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিজানুর রহমান পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলাদা কিছু করার চিন্তা থেকেই মশলার ব্যবসায় নামেন তিনি।
পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পেস্ট ছাড়াও বর্তমানে মশলাসহ ১২০ ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বিটিএম ফুড। প্রতিষ্ঠানটির মাসিক টার্নওভার প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
বিটিএম ফুডে বর্তমানে কাজ করছেন ২১ জন কর্মচারি ও ১০ জন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।
মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, পেস্ট তৈরির মেশিনটি তিনি নিজেই ডিজাইন করেছেন। বানিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে।
বাজারঘুরে দেখা গেছে, বিটিএম ফুডের পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পেস্ট গৃহিণীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বড় শহরেই কেবল এই পেস্ট পাওয়া যাচ্ছে।
মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তার কারখানায় তৈরি পেস্টের দাম একটু বেশি। এ কারণে খুচরা দোকানে তা সরবরাহ করতে পারছে না বিটিএম ফুড।
৩০০ গ্রাম পেঁয়াজের পেস্ট বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। একই পরিমাণ রসুন ও আদার পেস্ট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। পেস্টগুলো ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
মিজানুর রহমান বলেন, 'দ্রুত পচনশীল বলে পেস্টগুলোতে কিছুটা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়।'
বিটিএম ফুডের আরও দুটি জনপ্রিয় পণ্য কাচা হলুদের গুড়া ও রেড টি মাশালা।
রামপুরার পশ্চিম উলনে বিটিএম ফুডের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, একটি কক্ষে বসে কয়েকজন নারী পেঁয়াজ, রসুন ও আদার খোসা ছাড়াচ্ছেন। এরপর এগুলো মেশিনে দিয়ে পেস্ট তৈরি করা হয়।
পাশের আরেকটি কক্ষে তিনটি ছোট ছোট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে অন্যান্য মশলার গুড়া তৈরির জন্য।
এদিকে, বগুড়ার মশলা গবেষণা কেন্দ্র পেঁয়াজের গুড়া তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, যেগুলো দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পোস্ট হারভেষ্ট) ড. মো. মাসুদ আলম জানান, পেঁয়াজের তৈরি গুড়া ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা গেলে বছরজুড়ে কাচা এ পণ্যের ওপর যে চাপ থাকে, তা কমে আসবে। এতে দেশে পেঁয়াজের সংকট অনেকটাই এড়ানো যাবে।