বেদে নারীরাও ইয়াবা ব্যবসায়
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া দরগাহ পাড়ার নিকটবর্তী বাবুলের ভাড়াবাসা থেকে ৫ বেদে নারীকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে রামু থানা পুলিশ। এ সময় বাড়ির মালিক জসিম উদ্দিন বাবর ওরফে বাবুলকে আটক করা হলেও পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বেদে নারীদের কাছ থেকে ২৩ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তবে ইয়াবা উদ্ধারকালে ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয়দের দাবি, এ সময় সাড়ে ১০ কাড ইয়াবা উদ্ধার হয়। সে হিসাবে ইয়াবার পরিমাণ ছিল লক্ষাধিক।
মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা সাভারের পোড়াবাড়ী এলাকার মন্টু মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫০), একই এলাকার হাছানের স্ত্রী হাসিনা আক্তার (২৬), রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে বিমলা আক্তার (২৭), কাজী মিয়ার মেয়ে আলেয়া আক্তার (২৫) ও আমজাত আলীর মেয়ে সুজাতা বিবিকে (৩০)। এদের সবার বাড়ি ঢাকার সাভারে হলেও বেশ কিছুদিন ধরে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া দরগাহ পাড়া লাগোয়া ওই ভাড়াবাসায় অবস্থান করছিলেন।
অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে পুলিশকে সহযোগিতা করা দরগাহ পাড়া এলাকার ছৈয়দ মিয়া জানান, ওই ভাড়াবাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভাড়াটিয়া বেদে নারীদের আটক করে। তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে ১০টি পূর্ণ ও একটি অর্ধেক কার্ড ইয়াবা মিলেছে (মাদক ব্যবসায়ীদের মতে, ১ কার্ড সমান ১০ হাজার ইয়াবা)। সেইসব প্যাকেটসহ গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে যায় পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রেপ্রার হওয়া ওই বেদে নারীরা প্রায় দুই বছর ধরে এ ভাড়াবাসায় অবস্থান করছেন। দরগাহ পাড়া এলাকার একটি মাদক সিন্ডিকেট তাদের দিয়ে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। নোয়াখালী থেকে আসা সোহাগ, ওই ভাড়া বাসার মালিক জসিম উদ্দিন বাবর ওরফে বাবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল ফয়েজ, নাছির, শফি আলম, নুরুল হক, মোস্তফা, জমির উদ্দিন সাকিব, আবু জাফর, হালিমুর রশিদসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে গড়া সিন্ডিকেট এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত।
বেদে নারীরা দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখিত সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কৌশলে পাচার করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মতো বেদে নারীদের প্রতি প্রশাসনের তেমন নজর না থাকায় তাদের দিয়ে অনায়াসে মাদক পাচার করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করেছে সিন্ডিকেটটি।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বেদে সম্প্রদায় দলবেঁধে একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে অস্থায়ী ঘর তুলে অবস্থান করে আবার কিছুদিন পর অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু এসব নারী বছরের পর বছর ভাড়াবাসায় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বহনকারীরা আটক হলেও গডফাদাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
রামু থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২৩ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ ৫ বেদে নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় আমরা বাড়ির মালিক বাবুলকেও আটক করে নিয়ে আসি। পরে ঘটনা খতিয়ে দেখে তার সম্পৃক্ততা না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে বেদে ৫ নারীকে বিকেলে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইয়াবার পরিমাণ বেশি থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে ওসি বলেন, একটা 'ট্যাবলেট'ও এদিক-ওদিক হয়নি।