বেনাপোল দিয়ে রফতানি কমেছে এক লাখ টন
করোনার প্রভাবে গত অর্থবছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি কমেছে অন্তত এক লাখ টন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় পণ্য রফতানিতে সে দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ কম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার প্রভাব। ফলে অন্য অর্থবছরের তুলনায় গত বছর এই বন্দর পণ্য কম রফতানি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত অংশে নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক তল্লাশি ও বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে অভিযোগ রয়েছে। করোনার কারণে রফতানি বাণিজ্য পিছিয়ে গেলেও সীমান্তে বাণিজ্য তদারকিতে নিয়োজিতরা আন্তরিক হলেই বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে রফতানি হয়েছিল ১৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫৭ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর মধ্যে গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ টন। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রফতানি হয়েছিল চার লাখ এক হাজার ১৭৭ টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট ও পাট জাতদ্রব্য, তৈরি পোশাক, মাছ, কেমিক্যাল, মেহেগনি ফল, গার্মেন্টস ঝুট (টুকরা কাপড়), চালের কুড়া, নারকেলের শলা, সাবান, টিস্যু পেপার ও প্লাস্টিক ডাস্ট উল্লেখ্যযোগ্য।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, দেশে স্থলপথে যে বাণিজ্য হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রথম থেকেই এ পথে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। কিন্তু করোনার কারণে গত পাঁচ মাস রফতানি বন্ধ ছিল। আবার ভারত অংশে নানা হয়রানিতে ব্যাহত হচ্ছে এ বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারতীয় পণ্যের রফতানি বাণিজ্যে ভারতীয়দের আগ্রহ বেশি থাকলেও বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে তাদের আগ্রহ কম।
''ভারত অংশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও হয়রানি কমলে বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে। করোনায় রফতানি কিছুটা কমলেও আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে'', যোগ করেন তিনি।
''করোনার কারণে গত পাঁচ মাস ধরে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। যে কারণে গতবছরের তুলনায় রফতানি এক লাখ টন কম হয়েছে। রফতানি বাড়ালে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে তেমনি দেশে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে'' বললেন বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক।
রফতানি পণ্য বহনকারী বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা বলছেন, অভিযোগ থাকলে বিএসএফ ট্রাক তল্লাশি করবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সব ট্রাক দাঁড় করিয়ে তল্লাশিতে সময়ক্ষেপণ হয়ে থাকে। এতে রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার নিয়ামুল ইসলাম বলেন, করোনায় রফতানি কিছুটা কমলেও আবার বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হয়েছে। ভারত অংশে হয়রানি বন্ধে আলোচনায় তারা সন্তোষজনক সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।