ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধ করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
রোববার (২১ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ করেছি সারাদেশে রিকশা-ভ্যানের মধ্যে মোটর লাগিয়ে রাস্তায় চলছে। শুধু সামনের চাকায় ব্রেক, পিছনের চাকায় কোন ব্রেক নেই বা ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। সেগুলো যখন ব্রেক করে যাত্রীসহ গাড়ি উল্টে যায়। এই ধরনের দৃশ্য আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি হাইওয়েগুলোতেও এই রিকশা চলে আসছে। এজন্য সারাদেশে এই ধরনের রিকশা, প্যাডেল চালিত রিকশার বিষয়ে আমরা বলছি না। প্যাডেল চালিত রিকশাকে যারা ইঞ্জিন দিয়ে রূপান্তর করেছেন সেই সব রিকশা-ভ্যান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আজকের সভায় হয়েছে।
আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেই কমিটির ১১১টি সুপারিশ ছিল। পরে এ বিষয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে, অল্প কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করব আমরা সেই বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।
"ব্যাটারি চালিত রিকশার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেন, কিন্তু অটোরিকশা যানজটের কারণ এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসছে কী না"-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, "নসিমন, করিমন, ভটভটি এবং ঢাকা শহরে বিভিন্ন রকমের অটোরিকশা চলছে। আমরা এখনও যানবাহনের সঠিক ব্যবস্থা করতে পারিনি। গ্রামাঞ্চলে সুন্দর রাস্তা হয়ে গেছে। সেখানে রিকশা, সাইকেল কিংবা মোটর সাইকেল ছাড়া পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। সেজন্য নসিমন, করিমন-এগুলো যানবাহনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। এটি নিয়ে আমাদের আলোচনা হবে, যাতে করে খুব শীঘ্রই এটিকে পরিমিত এবং ফাইনালি বন্ধ করা যায়। আমরা সেটা নিয়েও কাজ করবো।"
মন্ত্রী আরও বলেন, "ইজিবাইক যথেষ্ট পরিমাণে এসে গেছে। ছোট-ছোট গলিতে এগুলো চলার কথা ছিল। কিন্তু এখন এগুলো সর্বত্র বিচরণ করছে। আমাদের ঢাকা শহরে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার মোটরচালিত রিকশা এবং ভ্যান ডেস্ট্রোয় (ধ্বংস) করে দিয়েছি। ইজিবাইকগুলো নিয়ন্ত্রণ করে দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন তাদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের হতে না পারে। হাইওয়ে বা বড় রাস্তায় না আসতে পারে। এটাও ক্রমান্নয়ে বন্ধ করা হবে।"
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, "আমরা হাইওয়েতে এখন ক্যামেরা ফিট করছি। ক্যামেরার টেন্ডারও হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের রাস্তাটি পুরোপুরি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাহলে কিভাবে এক্সসিডেন্ট হল, কে গাড়ি নামালো, সবগুলোই আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমাদের পুলিশ বাহিনী ওখানে বসে বসে দেখতে পারবে কে কি করছে।"
তিনি জানান, ইজারাকৃত জায়গায়, স্থানীয় সরকার পরিচালিত নির্ধারিত ফি, টোল, পরিবহনের টার্মিনাল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতে পারবে না। নির্ধারিত স্থান থেকে টোল বা রাজস্ব আদায় করতে হবে। সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যারা বাস চালায় তারা সবসময় বলে বিভিন্ন ধাপে-ধাপে চাঁদা দিতে হয়। এটার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও জড়িত। সেক্ষেত্রে কিভাবে পুরোপুরি আশা প্রকাশ করছেন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এটিতো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, কোটি-কোটি টাকা চাঁদা বাণিজ্য চলে-একজন সাংবাদিক এমন প্রসঙ্গ তুললে মন্ত্রী বলেন, "চাঁদা বাণিজ্যের কথা আমি বলব না, আমি বলবো একটি টোল আছে, সেটি দিতে হবে। তা কোথা থেকে নেবে, কীভাবে এবং কত টাকা নেবে সেটি নির্ধারিত হবে। সেই জায়গা ছাড়া এই টোল কেউ নিতে পারবে না। পরিবহনের যে চাঁদা, যেটা মালিক বা শ্রমিকরা নিয়ে থাকে সমিতি চালানোর জন্য, তাও নির্ধারিত রয়েছে, সেটাও বাস টার্মিনাল বা যেখান থেকে বাস ছাড়েন এর বাইরে কেউ নিতে পারবে না।"
ঢাকাতেও আমরা দেখি বিভিন্ন ঠিকাদারের নামে বিভিন্ন সিগন্যালে রানিং গাড়ি থেকে চাঁদা নেয়া হয়, এটি সবাই জানে-আরেকজন সাংবাদিক এমন প্রসঙ্গ তুললে মন্ত্রী বলেন, 'এটা আমরা জানিয়ে দিচ্ছি, যে-যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্ব স্ব মন্ত্রণালয় বসে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, এ সকল চাঁদাবাজি কিংবা যত্রতত্র কালেকশন যাতে না করে।'
পরিবহন শ্রমিকদের মালিকপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। সেটা দেওয়ার জন্য মালিক ও শ্রমিক পক্ষ আজ উপস্থিত ছিলেন। তারা দুই পক্ষ নিজেরা বসে এ বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
গত ২৩ ডিসেম্বর যে মিটিং হয়েছিল সেখানে আজকের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ৬ মাসে কেন বাস্তবায়ন হয়নি-জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'সড়ক আইনের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে আছে, মালিকদেরকে অবশ্যই নিয়োগপত্র দিতে হবে। সেই আইনটি পাস হয়েছিল। সেটি পরিশুদ্ধ করে আবার পার্লামেন্টে আসছে। এটা নিয়ে অনেক জটিলতা আছে। আমরা দীর্ঘ আলাপ করেছি। চালক এবং শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় জায়গা পাল্টায়। এক মালিক থেকে আরেক মালিকের কাছে চলে যায়। নানান ধরণের কথাবার্তা আসছে। সেজন্য বলে দিয়েছি, দুই পক্ষই বসে খুব শিগগিরই এর ব্যবস্থা করে দিতে।''
মন্ত্রী আরও বলেন, 'এই ব্যবস্থা না করলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এখানে আছেন, বিআরটিও ব্যবস্থা নেবে। যাতে করে তারা রেজিস্ট্রেশন করার সময় সেগুলো চায়, না দেখাতে পারলে রেজিস্ট্রেশন দেবেন না, সে ধরনের একটা কথাবার্তা চলছে।'