ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে হেফাজতের তাণ্ডব: সংস্কারে লাগল কোটি টাকা
হেফাজতের তাণ্ডবের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর ফের সচল হলো পূর্বাঞ্চল রেলপথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন।
ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনটি সংস্কার করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা।
হেফাজতের তাণ্ডবের পর গত ২৭ মার্চ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সব ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে আজ শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে থামে সিলেটগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন। এর মধ্য দিয়ে ফের সচল হলো স্টেশনটি।
এর আগে শনিবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্রাহ্মণাবড়িয়াগামী যাত্রীদের ফুল উপহার দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন পুনরায় চালুকরণের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে রেলমন্ত্রী বলেন, 'গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টারের রুম, অপারেটিং রুম, ভিআইপি রুম, প্রধান বুকিং সহকারীর রুম, টিকেট কাউন্টার, প্যানেল বোর্ডসহ সিগনালিং যন্ত্রপাতি, পয়েন্টের সিগন্যাল বক্স এবং লেভেল ক্রসিং গেটসহ অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃতকারীরা।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যারা বাংলাদেশ চায়না তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রেলওয়ের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণকে একটি সহজ এবং আরামদায়ক সেবা প্রদানে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।'
পুনরায় রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম চালু উপলক্ষে দুপুর ১২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে পৌর আওয়ামী লীগ।
এতে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক আলামিনুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি প্রমুখ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। নষ্ট করে দেওয়া হয় সিগন্যালিং সিস্টেমসহ স্টেশনের সবকিছু।
এ ঘটনার জেরে এই স্টেশনে সব ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে স্টেশনটি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
পরবর্তীতে নাগরিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন থেকে তিনটি মেইল ও একটি কমিউটার এবং ১৬ জুন থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রারিত দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় স্টেশনের সংস্কার কাজ।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সিরাজ জিন্নাত বলেন, 'আগুনে পোড়ানো স্টেশনের ভবন সংস্কার ও সিগন্যালিং সিস্টেম নতুন করে স্থাপনসহ অন্যান্য সংস্কার কাজে প্রায় ১ কোটি টাকা লেগেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্টেশনের আধুনিকায়নের আরও কাজ বাকি আছে। সেগুলোর কাজও দ্রুত শুরু হবে।'