ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছেন না ক্রেতারা, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
টানা সাড়ে তিন মাস বন্ধের পর এখন দেশের ভরা মৌসুমে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এতে কাপাল পুড়েছে কৃষকদের। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করে স্বস্তিতে নেই আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না ভারতীয় পেঁয়াজ। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা।
বাজারে চাহিদা বেশি দেশি পেঁয়াজের, দামও কম। অন্যদিকে, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে হুট করেই ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বছরের শেষের দিকে, ২৯ ডিসেম্বর রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত। এরপর এ বছরের শুরুর দিকে, ২ জানুয়ারি থেকে আবারও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।
পেঁয়াজের বড় পাইকারি বাজার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার।
পেঁয়াজের আড়ৎদার ব্যবসায়ী মেসার্স সাকিব এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আক্তারুজ্জামান আক্তার জানান, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ পাইকারি দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭-২৮ টাকা, খুচরা ৩০ টাকা। মেহেরপুর জেলার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ২০-২২ টাকা ও খুচরা ২৫ টাকা। হল্যান্ডের পেঁয়াজ পাইকারি ১৯-২০ টাকা, খুচরা ২০-২১ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি ৩৬-৩৭ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
তিনি বলেন, 'বাজারে এখন চাহিদা বেশি দেশি পেঁয়াজের। এটি বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ২৭-২৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে আড়তে রেখে লোকসানে পড়েছি। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৯ টাকা দরে কিনে আমি বিক্রি করেছি ৩৫ টাকায়। তবু মানুষ কিনছে না। আড়তে ২০০ বস্তা ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি।'
ভোমরা সহকারি কমিশনারের কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা আকবার আলী জানান, গত ২ জানুয়ারি থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২০৪১.৮ মেট্রিকটন। এসব পেঁয়াজে কোনো শুল্ক নেওয়া হয়নি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর বাংলাদেশ সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক ফ্রি করে দেয়। সরকারি সেই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে, যার কারণে পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্ক নেওয়া হচ্ছে না।
ভোমার বন্দরের ব্যবসায়ী বিপ্লব ট্রান্সপোর্টের সত্ত্বাধিকারী রতন বলেন, 'এ পর্যন্ত পাঁচ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করেছি। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা নেই। ভারত থেকে ক্রয় করে এনে খরচ ধরে বিক্রি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, দেশি পেঁয়াজের চেয়ে কেজি প্রতি ৮-১০ টাকা বেশি দাম পড়ছে। এতে ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। আমি ভারত থেকে পাঁচ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসানে পড়েছি। তাছাড়া এখন পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। বর্তমানে ১০-১২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।'
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস ও দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক জিএম আমির হামজা বলেন, 'দেশে এখন ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা নেই। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন না। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আমদানি কমে গেছে।'
সাতক্ষীরা জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা (বিপনন) সালেহ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, 'বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা, হল্যান্ডের পেঁয়াজ ১৮-২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৩৩-৩৭ টাকা। এখন দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম যখন বেশি ছিল, তখন লাভের আশায় হাজার হাজার টন পেঁয়াজ এলসি করে রেখেছেন। এখন সেইসব আমদানিকরা পড়েছেন মহাবিপদে!'
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৬২০ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষাবাদ হয়েছিল ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বেশি হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ। চাহিদা রয়েছে ২০-২২ হাজার মেট্রিকটন।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, দেশে যখন সবজি উৎপাদন মৌসুম চলছে, ঠিক তখনই আবারও ভারত থেকে আসছে পেঁয়াজ। এতে দেশীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌসুম নয়, এমন সময় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে কৃষকরা লাভবান হতে পারতেন। তাছাড়া বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছেন না।