বাংলাদেশের ভ্যাকসিন মিশন: ২ বছরের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষকে টিকাদান
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/covid-19-vaccination-plan-bangladesh88_0.jpg)
দুই বছরের মধ্যে দেশের ১৪ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। লক্ষ্যটা পরিষ্কার হলেও বেশ উচ্চাভিলাষী।
অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে করোনার ক্রমবর্ধমান অশিভাপ থেকে জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে এই অভূতপূর্ব লক্ষ্যে পৌঁছানো ছাড়া আর কোনো উপায়'ও নেই বাংলাদেশের।
বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া করোনার মতো নতুন সংকট মোকাবেলা করার কোনো অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই; নেই বিস্তৃত পরিসরে এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে এতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকাদান করার মতো যথেষ্ট অবকাঠামো বা দক্ষ জনবল।
এই কঠিন লক্ষ্যে সফলভাবে পৌঁছানো ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই বাংলাদেশের; এটিই বাস্তবতা।
বাংলাদেশ সরকার বিসৃত এক মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে, টিকা হাতে এলেই নতুন বছরের যে যেকোনো সময় ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই টিকাদান কর্মসূচি চালু করার।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বা আলাদাভাবে ঝুঁকি সংক্রান্ত নিরাপত্তা চিন্তা করার প্রয়োজন না থাকলেও কোভিড-১৯ এর টিকাদানের ক্ষেত্রে টিকা মজুদ করার স্থান থেকে শুরু করে টিকাদানের সময় তা পরিবহন করা পর্যন্ত সকল কিছুই নিয়েই আলাদাভাবে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা আছে।
টিকাদান কর্মসূচী যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সাত কোটি মানুষকে টিকাদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। করণীয় সেই সব কাজের তালিকাটাও যথেষ্ট লম্বা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/vaccination_plan_procurement_and_logistics89.jpg)
মহাযজ্ঞ
বিস্তৃতভাবে টিকাদান কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে টিকা প্রদানের জন্য ৮০ হাজার মানুষকে নিয়োগ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং টিকাদানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাই এ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কাজ। আর টিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিরাট কর্মসূচির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে টিকাদানের জন্য বিশেষ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন, যারা দেশব্যাপি সর্বস্তরে টিকার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করবে।
টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদী তার বক্তব্যে এ কর্মসূচীর বিশালতার ব্যাপারটি তুলে ধরেছেন। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এর প্রয়োগের ব্যপকতা বোঝাতে তিনি টিকাদান কর্মসূচিকে তুলনা করেছেন তার দেশের নির্বাচন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে।
সম্ভাব্য সকল বাঁধাকে বিবেচনায় নিয়ে সফলভাবে কোভিড-১৯ এর টিকা প্রয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার সর্বস্তরে সমন্বয় ও সহায়তা করার জন্য পরিকল্পনা ও সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি দেশের সর্বস্তরে কোভিড -১৯ টিকা প্রয়োগ ও প্রবর্তনের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ তদারকি করবে। এপর্যন্ত ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এই খাতে এবং আরো তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন বলেন, জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক মহলে অনুমতি পাওয়ার পরই এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/estimated-share-of-operational-costs90.jpg)
কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট
মহাপরিকল্পনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৬ টি জেলাতেই অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণেরও সক্ষমতা নেই, যা সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
আগামী মাসেই অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম চালান চলে আসার কথা বাংলাদেশে। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই যুক্তরাজ্যে সর্বস্তরের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে অক্সফোর্ডের টিকা।
তবে বাংলাদেশ যদি মডার্নার টিকা কিনতে চায় সেক্ষেত্রেও ৫৬টি জেলার জন্য উন্নতমানের রেফ্রিজেটর কিনতে হবে টিকা সংরক্ষণের জন্য। মডার্নার টিকা সংরক্ষণ করতে মাইনাস ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে ফাইজার এর টিকা সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন হয় আরো অধিক শীতল তাপমাত্রার, প্রায় মাইনাস ৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
অতিরিক্ত কোল্ড চেইন সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে জেলা ও উপজেলা গুলোতে। অধিক শীতল তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটর, শীতল বাক্স, ভ্যাকসিন পরিবহনের বাক্স, ফ্রিজ ট্যাগ-২এস এবং অন্যান্য সরঞ্জামও কিনতে হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এমআর ক্যাম্পেইনের জন্য বাস্তবায়িত পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় স্তর থেকে শুরু করে অন্যান্য উত্স থেকে হিমাগার ভাড়া নিয়ে কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের অতিরিক্ত সংরক্ষাণাগারে প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা যেতে পারে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য তৈরি সিরিঞ্জ গুলোকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে ব্যবহার করা হবে সেফটি বক্স। আর ব্যবহৃত টিকার ব্যবহৃত শিশিগুলো গণনা করা হবে নষ্ট করে ফেলার আগে।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় ইপিআই এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে নিয়মিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহণ ও প্রয়োজনে কোল্ড বক্স ব্যবহার করে জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে টিকা পৌঁছে দেবার জন্য।
জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এবং ক্রমান্বয়ে উপজেলা ও জোন/ওয়ার্ডে পর্যায়ে কোল্ড বক্সে সংরক্ষিত টিকা পাঠানো হবে।
এই কর্মসূচি চলাকালে টিকা এবং দরকারি সরঞ্জাম সারাদেশে বিতরণের জন্য জাতীয় ইপিআই কে প্রয়োজনীয় পরিবহন ভাড়া করতে হবে। এছাড়া পরিবহণ থেকে টিকা সাবধানতার সাথে নামাতে ও ওঠাতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করার প্রয়োজনও হবে।
মহাপরিকল্পনার নথি অনুযায়ী, 'রেফ্রিজারেটেড পরিবহন ভাড়া করার প্রয়োজন হলে মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানি অথবা ফার্মা সল্যুশন বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে চুক্তি হতে পারে। তারা ভাড়ার ভিত্তিতে যে সব ফ্রিজার ট্রাক প্রদান করবে তার সক্ষমতা ২০০ থেকে ৪০০ কিউবিক পর্যন্ত হবে।' সেই নথির অনুলিপি আছে টিবিএস এর কাছে।
টিকাদান কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক প্রস্তুত রাখাও একটি গুরূত্বপূর্ণ দিক।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/process-of-individual-case-registration91_0.jpg)
নিশ্চিত উৎস থেকে ক্রয় করা টিকার পরীক্ষা হবেনা
ভ্যাকসিনে উৎস এবং ক্রয়ের পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করেই আমদানির চাহিদা নির্ধারণ করা হবে।
কোভাক্স সুবিধার মাধ্যমে কেনা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশনের সময় ২-৩ দিন, অন্যান্য আমদানিকৃত টিকার জন্য ১২-১৫ দিন এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টিকার জন্য ১২-১৫ দিন সময় লাগবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত উৎস থেকে কেনা টিকার উপর পরীক্ষা করবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত টিকা, ইইউএল এর তালিকাভুক্ত টিকা অথবা কঠোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য টিকা পরীক্ষা করা ছাড়াই প্রয়োগ করা হবে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অনুমদিত টিকা ছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টিকা বা আমদানিকৃত টিকার জন্য গবেষণাগারে তিনটি ধাপে পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।
পর্যবেক্ষণ, ব্যবহার পরবর্তী লক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং বিপণন পরবর্তী তাদারকির জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিবেচনায় টিকার অতিরিক্ত পরীক্ষা করা হতে পারে।
কারা অগ্রাধিকার পাবেন?
ভ্যাকসিন ব্যবহারের সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে সুরক্ষার জন্য একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা (আরএমপি) গ্রহণ করতে হবে। ভ্যাকসিন ব্যবহারে যে কোনও দায় ও ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে ক্যোভ্যাক্স সুবিধা নিয়ে জাতীয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রস্তুতকারকদের মধ্যেও একটি স্পষ্ট ধারণা ও পরিকল্পনা থাকা উচিত।
টিকার পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী তথা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োঃজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী এবং গণপরিবহন কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড বা পাসপোর্ট ব্যবহার করে অথবা স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা কিংবা তালিকা সরবরাহের জন্য বিভিন্ন বিভাগকে অনুরোধ করে নিবন্ধিত করা হবে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/vaccination-sites92.jpg)
বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা
গুণগত মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং জনস্বাস্থ্যের উপর টিকার নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করার জন্য নেয়া হবে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ব্যবস্থা।
অন্যান্য ভ্যাকসিনের মত কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের কারণেও ব্যথা, ফোলাভাব, চুলকানি, বমি বমি ভাব এবং মাথা ব্যথার মতো খুব সামান্য প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে গুরুতর অসুস্থতার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ভ্যকসিন ব্যবহারের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখলেই তা শনাক্ত করে রিপোর্ট করবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। টিকাদানের পর মৃত্যু কিংবা হাসপাতালে ভর্তির মতো গুরুত্বর যে কোনো প্রয়োজনেও তারা কাজ করবেন।
কোথা থেকে আসবে ভ্যাক্সিন
বাংলাদেশের জনগণের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ২৮ কোটি ডোজ প্রয়োজন, যার মধ্যে 8 দশমিক ৮ কোটি ক্যোভ্যাক্স থেকে এবং ৩ কোটি ডোজ ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও মডার্না, ফাইজারের পাশাপাশি চীন এবং রাশিয়ান প্রস্তুতকারকদের সাথেও বাংলাদেশ আলোচনা করেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত সুলভ মূল্য এবং বিশ্বমানের পরীক্ষাগার সুবিধার জন্য ক্যোভ্যাক্সকে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এম হেলাল উদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আমরা যদি কোভ্যাক্স থেকে সরবরাহ পাই তবে আমাদের আর পরবর্তী পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/table-dc93.jpg)
কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন?
প্রতি ডোজ ১.৬ ডলার দামে প্রথম চালানে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে কোভ্যাক্স। পরবর্তীতে প্রতি ডোজের দাম পড়বে প্রায় ৬ ডলার।
কোভ্যাক্সের বরাদ্দ অনুযায়ী, প্রথম ভাগে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর (৩ দশমিক ৪ কোটি) জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে, পরবর্তীতে ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য সরবরাহ করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন কেনা ও টিকাদান কার্যক্রমে খরচ হবে ২৯ কোটি ৩ লাখ ডলার। ভ্যাকসিন প্রদান প্রকল্পের সহায়তায় প্রতিজনের জন্য ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করা হবে ২ ডলার।
এছাড়াও ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলো থেকে ভ্যাকসিন কেনার পরিকল্পনাও করেছে সরকার। প্রতি ডোজ ৫ ডলার হিসেবে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন কিনতে খরচ হবে ১৫ কোটি ডলার ও টিকাদান কর্মসূচী সংশ্লিষ্ট কাজে খরচ হবে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন কেনার খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদেই ভ্যাকসিন প্রদানের প্রস্তুতি ও সরবরাহের কাজে ১৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলারে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণে ভ্যাকসিন কেনার মোট খরচ এখনো হিসাব করা সম্ভব হয়নি।
কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
অর্থায়ন হবে কীভাবে?
ভ্যাকসিন কেনা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য টিকাদান কর্মসূচীতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ও কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
গত জুনে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকার কোভিড-১৯ জরুরি প্রতিক্রিয়া ও মহামারি প্রস্তুতি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে সহায়তা পেয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও অতিরিক্ত ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। ৮৫০ কোটি টাকা সহায়তা দেয়ার সাথে প্রকল্পের আকার বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা করার পরামর্শ দিয়েছে এআইআইবি। ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা সংশোধিত প্রকল্প আগামী মাসে অনুমোদন দিতে পারে একনেক।
ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, কর্মী যোগাড় ও প্রশিক্ষণে বাকি অর্থ খরচ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায়ই জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা ও ভেন্টিলেটর ব্যবস্থাসহ ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ তৈরির কাজ হবে।
অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন বলেন, "ইতোমধ্যেই কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের সাথে ৫ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এআইআইবি থেকে অতিরিক্ত আরও ১০-২০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছি আমরা। এছাড়াও ফ্রান্স ও জাপানও টিকাদান কর্মসূচীতে অর্থায়নে আগ্রহী। তাদের সাথেও আলোচনা চলছে।"
বিশ্বব্যাপী টিকাদান
এ মাসের শুরুতেই গণহারে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুকদের স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিন প্রদান করছে রাশিয়া। জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি ভ্যাকসিন ইতোমধ্যেই ১০ লাখ মানুষকে দিয়েছে চীন। জনসাধারণের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসুচী শুরুর পরিকল্পনা করেছে চীন।
২৭টি দেশের ৪৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে টিকাদানের কর্মসূচী শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন দিয়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছে ইইউ।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/12/29/covid-19_vaccine_1.jpeg)
কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ কিনে নেয়ার চুক্তি করেছে ইইউ। কোভিড-১৯ এর আঘাতে বিপর্যস্ত জোটভুক্ত দেশগুলোতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইইউ।
এপ্রিলের মধ্যেই ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের টিকাদান কর্মসূচীর প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। দুটি দেশই ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন বেছে নিয়েছে।
জানুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচী শুরুর পরিকল্পনা করেছে ভারত, আগস্টের মধ্যেই ৩০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা আছে দেশটির।