মওদুদ আহমদ আর নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৮১ বছর বয়সী মওদুদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত ১২টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সের একটি প্লেনে তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এছাড়া গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। ২১ জানুয়ারি পুনরায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
মওদুদ আহমেদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। লন্ডনে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে নিজেকে আইন পেশায় নিয়োজিত করেন। এছাড়া তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন।
মওদুদ আহমদ ১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পাঁচবার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন। মওদুদ আহমেদ জিয়াউর রহমানকে বিএনপি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এই দলের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এরশাদের জাতীয় পার্টির সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।