মহামারির কারণে হচ্ছে না ১৫০ বছরের পুরনো শেরপুরের ‘মাছের মেলা’
আনুমানিক ১৫০ বছর আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুর মুখ এলাকায় পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র মাছের মেলায় শুরু করে করেন জমিদার মথুর বাবু। সেই থেকে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে চলমান এই মেলা এক সময় স্থানান্তর হয় উপজেলার শেরপুরে। ১৫০ বছরের এই পরিক্রমায় চলতি বছরে ঘটছে ছন্দপতন। ১৪ জানুয়ারি এ বছর এলাকায় পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে বসবেনা মাছের মেলা।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় এ বছর হচ্ছেনা ঐতিহ্যবাহী সিলেট বিভাগের এই বিশাল মাছের মেলা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। তিনি জানান, মৌলভীবাজারবাসীকে করোনা মুক্ত রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনার প্রভাব কেটে যাওয়ার পর আমরা যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরব তখন যদি এলাকাবাসী অন্য কোন তারিখে এই মেলা আয়োজন করতে চায় আমরা সহযোগিতা করব।
ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলা সম্পর্কে এলাকাবাসী জানান, এই মেলার সাথে সাথে জেলার শ্রীমঙ্গল, বড়লেখা ও কমলগঞ্জের একাধিক স্থানে বসে মাছের মেলা। আর এসব মেলায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাওড়-নদী থেকে ধরে আনা দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছ তোলা হয়। মেলায় কার থেকে কে বড় মাছ তুলতে পারে তার নীরব প্রতিযোগিতা চলে তাই বিক্রেতারা ৫/৬ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সিলেটের পাশাপাশি সারা দেশ থেকে মাছ উঠে এই মেলায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার উৎসুক মানুষ ভিড় করেন মেলায়। মেলা উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।
গত বছরের মেলা অয়োজক কমিটির সভাপতি মো. আশরাফ আলী খান জানান, গত বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল। এ বছর মেলা হবে কিনা তা নিয়ে আমরা আগেই দ্বিধায় ছিলাম কারণ করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক নুরুল ইসলাম জানান, শেরপুরের মাছের মেলা বন্ধ ঘোষণা হওয়াতে ঐতিহ্যের ছন্দপতন ঘটেছে কিন্তু করোনা মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশাল গন জমায়েত প্রতিহত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাওয়াদিঘি, হাইল হাওর ও মনু, ধলই, কুশিয়ারা নদীসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন হাওর বাওরের মাছের উপর নির্ভর করে প্রতিবছরই বসে এ মেলা। মেলায় বিক্রির জন্য প্রায় ৫/৬ মাস আগে থেকেই মৎস্যজীবীরা বড় বড় মাছ সংগ্রহ শুরু করেন। মাছগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় পানিতেই জিইয়ে তাজা রাখা হয়। মাছগুলো দীর্ঘ সময় পানিতেই থাকার সুবাদে সুযোগ পায় সঠিক প্রজননের।