মেঘালয়ের বিষাক্ত নদীর কারণে বিলুপ্ত বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির মাছ
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের একটি বিপন্ন প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হলো মেঘালয়ের বিষাক্ত 'নীল' নদী লুখা।
সোনাপুরের দক্ষিণে জৈন্তা পাহাড় হয়ে বাংলাদেশের, ৮ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত এ নদী স্থানীয়ভাবে লুবাছড়া হিসেবেই পরিচিত।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) 'রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবাস ধ্বংসের কারণে লুখা নদীর গোয়ালপাড়া লোচ (বৈজ্ঞানিক নাম: Neoeucirrhichthys maydelli) মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মেঘালয়ের পূর্ব জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার থাংস্কাই ও লুমশনং অঞ্চলের চুনাপাথরের খনি ও সিমেন্ট কারখানার নিষ্কাশিত বর্জ্যের কারণে শীতের সময় নদীটির পানি গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে।
লুখা নদীর দূষণের কারণে সিমেন্ট কারখানাকে দায়ী করে দূষণের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে এ সমস্যা সমাধানের জন্য মেঘালয় সরকারকে তিন সপ্তাহ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (কেএসইউ)।
লুখা নদীর পানি দূষণে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসের জন্য 'টপসেম সিমেন্ট' ও 'স্টার সিমেন্ট' নামের দুটি সিমেন্ট কারখানাকে দায়ী করা হয়।
এ দুটি প্রতিষ্ঠানই মেঘালয়ের পূর্ব জৈন্তিয়া পার্বত্য জেলার বৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। টপসেম সিমেন্টের উৎপাদনকেন্দ্র থাংস্কাইয়ের নিকটা আমদহে, খনি অবস্থিত দক্ষিম খলিয়াজড়িতে। স্টার সিমেন্টের কারখানা অবস্থিত লুমশনং-এ।
কেএসইউ-এর নারপুহ ইউনিটের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ২০০৭ সাল থেকেই নদীর পানি নীল হওয়া শুরু করে। ২০০৪ সালে স্টার সিমেন্ট এ অঞ্চলে উৎপাদন শুরু করে, টপসেম সিমেন্ট শুরু করে ২০০৬ সালে।
সিলেটের লুবাছড়া নদীতে বিগত বছরগুলোতে গোয়ালপাড়া লোচ মাছের দেখা মেলেনি। এ মাছটি প্রায় ৩.৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। মাছটির বিলুপ্তি বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।
আইইউসিএন এর প্রতিবেদনে জানান গেছে, বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীতে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ শেষ বারের মতো মাছটির দেখা মেলে। মাছটির আবাসস্থলের হুমকি বিবেচনায় মাছটি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইইউসিএন।
বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা জানিয়েছেন, লুবাছড়া নদীর বিষাক্ত পানি ছাড়াও কানাইঘাটের বৃহৎ পাথর খনিও গোয়ালপাড়া লোচ মাছের বিলুপ্তির আরেকটি কারণ হতে পারে।
শীতের সময় পাথর কোয়ারিগুলোতে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রতিদিনই ৪ লাখ ঘনফুট পাথর উত্তোলন করা হয়।
লুখা নদীর দূষণের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য কেএসইউ'র চাপের মুখে পড়েছে মেঘালয় সরকার। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিপন্ন প্রজাতির মাছটির বিলুপ্তির কারণে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে ভারত সরকার।