রিফাত হত্যা: মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় জনকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়াও চার জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজি, আল-কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান এবং নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, কামরুল ইসলাম সাইমুন, মো. সাগর ও মো. মুছা।
আসামিদের দণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র হালদার।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু'ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন।
রায়কে ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে বরগুনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে বরগুনায়।
রায় শুনে কেঁদেছেন রিফাতের বাবা : জানালেন সন্তুষ্টি কথা
রায় শুনে আদালতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচারে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা জানান দুলাল শরীফ।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ দ্রুত এ মামলার তদন্ত শেষ করায় পুলিশকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ''গত এক বছর ধরে আমাদের পরিবারে সদস্যরা কাঁদছি। আমাদের নির্ঘুম রাত কেটেছে। তবে ওই কান্না আর আজকের কান্নার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই কয়টা মাস এ দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম।''
'আমরা উচ্চ আদালতে যাব', রায়ের প্রতিক্রিয়ার মিন্নির বাবা
মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, ''আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।''।
এ ছাড়া এই রায় প্রত্যাশিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ''এ রায় দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।''
তিনি বলেন, গুরুতর আহত হওয়ার পরও রিফাত মিন্নিকে দোষারোপ করেনি। এ ছাড়ও মিন্নি নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে রিফাতকে বাচাঁনোর চেষ্টা করেছেন। নিয়ে গেছেন হাসপাতালেও।
তিনি আরো বলেন,''আমরা এ রায়ে অসন্তুষ্ট। তাই উচ্চ আদালতে যাবো। যা বলার তা উচ্চ আদালতে বলবো।'' উচ্চ আদালতে মিন্নি খালাস পাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রিফাত হত্যার মাস্টারমাইন্ড মিন্নি: রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত
রিফাত শরিফ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মিন্নিকে উল্লেখ করেছেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ষড়যন্ত্রের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। রায়ের অবজারভেশনে সেটাই এসেছে। এই মিন্নি রিফাত শরীফ হত্যা করার জন্য পরামর্শ করেছে। রায়ের অবজারভেশনে এটা আছে। এ কারণেই মিন্নিকে আজ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
রায়ের পর হাসতে হাসতে প্রিজনভ্যানে উঠলো রিফাত: ইশারায় চাইলো টাকা
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজীকে হাসতে দেখা গেছে।
রায় ঘোষণার পর আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় রিফাত হাসতে হাসতে প্রিজন ভ্যানে ওঠেন। এ সময় ভ্যানে উঠেই তিনি হাতের আশারায় কারো কাছে টাকাও চান।
বুধবার বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটের সময় এ দৃশ্যের অবতারণা হয় বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকে। রায় ঘোষণার পর ফাঁসির দণ্ডে দন্ডিত এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে মিন্নি ও আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন ব্যতিত অন্য সকল আসামিকে স্বাভাবিক দেখা যায়।
এ সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে রিফাত ফরাজি বলেন, ''আমরা যা করেছি তা আল্লাহই করিয়েছে। আর ভবিষ্যতেও যা হবে, তাও আল্লাহই করাবেন।''
পরে আদালত থেকে প্রিজনভ্যানের ভেতরেই উল্লাশ করতে করবে কারাগারে যান তারা।