রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিএক্টর ভ্যাসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরএনপিপি) স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেছেন।
তিনি আজ পৌনে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। রিএ্যাক্টর ভবনের ভেতর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর, রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে, রিএ্যাক্টর ভেসেলটি নকশা অনুযায়ী যথাস্থানে স্থাপন করা হয়। ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে এটি স্থাপন শেষ হলে 'জয় বাংলা, জয় বাংলা' শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রিএ্যাক্টর ভবন থেকে অনুষ্ঠানস্থল।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্রটি স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আমার ব্যক্তিগত জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুব আনন্দিত হতাম যদি স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারতাম। করোনা মহামারির কারণে সেটি সম্ভব হলো না। তবে দ্রুতই আমি এখানে আসবো"।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথেও পাকিস্তান আমলের বঞ্চনার ইতিহাস জড়িত। তারা ধোঁকাবাজি করেছে। শুধু জমি বরাদ্দ করে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়"।
জাতির পিতা স্বাধীনতার পরপরই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন, এমনটা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি-আইএইএ'র অনেক নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, "২০১৩ সালে রাশিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আমার আলোচনা হয়। বিশেষ করে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই এই প্রকল্প শুরু হয়।
রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের ফলে বিশ্বে পারমাণবিক যুগে বেশ শক্ত অবস্থানে এলাম আমরা। আর সেটি কিন্তু পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে"।
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, "এই পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীরাও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। সবকিছু ভালোভাবে পরিচালনা করতে আমরা তাদেরকে রাশিয়া ও ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি"।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, "আজ জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন। পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতির পিতা ও তার কন্যার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ"।
তিনি আরও বলেন, "রাশিয়া বাংলাদেশের দুঃখের দিনের বন্ধু। রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কারণে বিশ্ব সভ্যতায় অনন্য অবস্থায় উন্নীত হলো বাংলাদেশ"।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ বলেন, "পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ বেশ জটিল একটি বিষয়। রুশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার প্রমাণ ভিভিইআর রিএ্যাক্টর। যেটি রূপপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণের পর এটি পরিচালনার জনশক্তিকেও প্রশিক্ষিত করে দিচ্ছে বাংলাদেশ। পারমাণবিক প্রযুক্তি ক্লিন এনার্জির একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। এছাড়া রূপপুরের কারণে ২০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এটি শুধু স্থানীয় জীবনমানই পরিবর্তন করবে না বরং জিডিপি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। বাংলাদেশের পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রোসাটম। এবং সময়মতো এটির নির্মাণ শেষ করতে রাশিয়া সম্ভাব্য সবকিছু করবে"।
রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। এবং এখানেই ফিশন বা চেইন রিয়াকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচের এই প্রকল্পে নব্বই ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একই সাথে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রূশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট।
বার্তা সংস্থা বাসসের মতে, স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পই দেশের সবচেয়ে বড় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সর্বাধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২শ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও ১২শ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।