শিক্ষা খাতে সহায়তায় বাংলাদেশকে ৬২২ কোটি টাকা দেবে যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬২২ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি) অনুদান দেবে যুক্তরাজ্য। এক্ষেত্রে, মূলত প্রতিবন্ধী এবং মেয়েশিশুদের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের মিনিস্টার অব স্টেট ফর সাউথ এশিয়া, লর্ড তারিক আহমেদ বলেন, "বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করতে পেরে, এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য আরও দুটি নতুন প্রোগ্রাম ঘোষণা করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এই অনুদানের মাধ্যমে সেই ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে।"
'বাংলাদেশ-ইউকে: পার্টনারস ইন প্রোগ্রেস'-এ তার মূল বক্তব্যের সময় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, "আজ আমি বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে সমর্থন করার জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ডের একটি নতুন তহবিল ঘোষণা করছি। এর আওতায় থাকবে দেশের সব শিশু, বিশেষ করে মেয়েরা এবং প্রতিবন্ধীরা।"
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সোমবার (১৫ নভেম্বর) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লর্ড আহমেদ বলেন, শিশুদের বিকাশ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে অবদান রাখতে স্কুলগুলোকে অর্থায়ন করছে যুক্তরাজ্য।
'সর্বাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা' নামক প্রথম প্রোগ্রামের আওতায় থাকবে প্রান্তিক অঞ্চলের শিশুরা। এক্ষেত্রেও মেয়েদের এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার জন্য দেশের সরকারের নন-ফরমাল শিক্ষা ব্যুরোর সাথে কাজ করবে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য কী করতে হবে- সেটির গবেষণার জন্য অর্থায়ন করবে তারা। ইউনিসেফ এবং ব্র্যাকসহ কিছু সংগঠন থাকবে এই প্রোগ্রাম পরিচালনায়।
'বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন কর্মসূচি' নামক দ্বিতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। "আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের সম্ভাবনাময় বিকাশের জন্য প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে," লর্ড আহমেদ বলেন।
স্বচ্ছ নির্বাচনের দিকে জোর দিল যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায়, দেশের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে একটি উন্মুক্ত এবং জোরালো বিতর্ক হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন লর্ড আহমেদ। বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন স্বচ্ছ হবে এবং যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হবে, আশা করেন তিনি।
প্রতিটি দেশের সম্ভাবনার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি অপরিহার্য।এ বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেশ ভালোভাবেই জানতেন বলে যোগ করেন তিনি। এমনকি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। লর্ড আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখবে যুক্তরাজ্য।
"নিরাপত্তা পরিষদের একজন স্থায়ী সদস্য হিসাবে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি যে, আমরা এই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখবো," বলেন তিনি। কক্সবাজারে নিরাপত্তাহীনতা এবং দেশে চলমান সংকটের প্রভাব বাড়তে থাকায় এ বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে এবং আমি বাংলাদেশের পাশে আছি।"
সোমবার থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সিনিয়র কর্মকর্তাদের (সিএসও) কমিটির ২৩ তম সভা এবং ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পরিষদের ২১ তম সভা আয়োজিত হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে নতুন নেতা হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন লর্ড আহমেদ।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় বাংলাদেশ
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বকারী পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্যের সাথে নিজেদের ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে একই কথা বলেন।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হল যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো হলেও, সামগ্রিকভাবে সম্পর্কের উন্নতিতে 'আউট অফ দ্য বক্স' চিন্তা করা উভয় দেশের জন্যই ভালো হবে।"
লর্ড আহমেদ বলেন, "আমরা বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিই। আমরা আগেও বন্ধু ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও বন্ধু থাকব।"
লর্ড আহমেদ বাংলাদেশে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, কক্সবাজার সফর করে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমর্থনে সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।