শিবির সন্দেহে বুয়েটের শিক্ষার্থীকে 'পিটিয়ে হত্যা', আটক ৪
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে শিবির সন্দেহে 'স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার' অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা হলের নিচতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত ওই ছাত্রের নাম আবরার ফাহাদ (২১)। তিনি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে।
এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েট ছাত্রলীগের ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ সোহাগ, সাধারণ সদস্য অনিক সরকার এবং জিয়ন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চকবাজার জোন সহকারী কমিশনার সিরাজুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
শের-ই বাংলা হলের শিক্ষার্থীরা জানান রোববার (৬ অক্টোবর) রাত ৮ টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর শিবির সন্দেহে জেরা করার পর ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবরারকে পেটান। তবে ভয়ে শিক্ষার্থীদের কেউই নাম প্রকাশ করে কোন কথা বলতে চাননি।
পরে চিকিৎসককে ফোন করে শিক্ষার্থীরা। বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাসুক এলাহী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিঁড়ির পাশে ছেলেটিকে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।"
পরে হল প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশকে খবর দেয় তারা। পুলিশ এসে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু বলেন, "আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি আমরা।
পরে চতুর্থ বর্ষের কয়েকজনকে নিয়ে আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।"
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দু'টি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন আবরার।
আবরারের মৃত্যুর খবর পেয়ে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আসেন তার মামাতো ভাই আবু তালহা।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখি আমার ভাইটা মরে পড়ে আছে। আমরা যতোদূর শুনেছি, ওকে হলের সিনিয়র ভাইরা মারধর করেছে। আমরা ওর হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।"
ঘটনার বিষয়ে লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার কামাল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ জানায়, ফাহাদের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল।
ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে।
এদিকে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকশ শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে।
আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও।