সিনহা হত্যা মামলায় চলছে ষষ্ঠ দফা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিনের কার্যক্রম
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার চলমান বিচারকার্যের ৬ষ্ঠ দফার শেষদিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। বুধবার (২৭ অক্টোবর) সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্না ফারাহ্কে দিয়ে শেষ দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তিনি আসামি রাজিব হোসেন এর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন।
তিনি ছাড়াও আসামি আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই শাহজাহন আলী, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর জবানবন্দি রেকর্ডকারি অপর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. দেলোয়ার হোসেন শামীমসহ ৬ জন স্বাক্ষীর হাজিরা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম। গত ২৫ অক্টোবর ৬ষ্ঠ দফার তিনদিনের সাক্ষী কার্যক্রম শুরু হয়। গত দু'দিনে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে ওসি প্রদীপ কুমারসহ ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, মামলায় মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মাঝে পঞ্চম দফায় ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ৬ষ্ঠ দফার তিনদিনের প্রথম দু'দিনে ২২ জনসহ সাক্ষ্য শেষ হয় ৫৭ জনের। শেষদিনে গুরুত্বপূর্ণ ৬ জনের হাজিরা দেয়া হয়েছে। সবার সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হলে ৬৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া সম্পন্ন হবে।
পিপি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত সম্পন্ন করতে আমাদের প্রচেষ্টা থাকলেও আসামিপক্ষ সবসময় তাতে ব্যাঘাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবার সহযোগিতা পেলে মামলার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন পিপি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ সদস্যরা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। আসামিদের ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
গত ২৭ জুন ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফায় টানা তিনদিনে মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর ৬ষ্ঠ দফায় সাক্ষ্য চলছে।