সুন্দরবন উপকূলে ঝড়ো হাওয়া, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মানুষের অনীহা
সোমবার রাত থেকেই খুলনায় বিরাজ করছিল গুমোট আবহাওয়া। ছিল ভ্যাপসা গরম। মঙ্গলবার সকালে সামান্য রোদের দেখা মিললেও দুপুর থেকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মাঝেমধ্যে বইছে হালকা ও মাঝারি দমকা বাতাস। সেই সঙ্গে পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা খুলনায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬০৮টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ সব আশ্রয়কেন্দ্রে চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
খুলনায় সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলায় অবস্থানরত ১১টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ কন্টেইনার জেটি থেকে নিরাপদ স্থান, অ্যাংকোরেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে জাহাজে মালামাল ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।
খুলনা জেলা সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, আজ মঙ্গলবার বেলা ১২'টার আবহাওয়ার বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে খুলনার আকাশ মেঘলা রয়েছে। গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। এবং মাঝেমধ্যে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে হালকা দমকা বাতাসও বইছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় এবং আমাবস্যার প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে এ তিন জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলায় অবস্থানরত ১১টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ কন্টেইনার জেটি থেকে নিরাপদ স্থান অ্যাংকোরেজে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকেই জাহাজগুলো অ্যাংকোরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। মালামাল লোড-আনলোড ছিল সকাল থেকেই বন্ধ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই উপকূলবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং শুরু হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছে না। বাড়িঘর ও গরু-ছাগল ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে তাদের মধ্যে আগ্রহ কম। তবে, বুঝিয়ে-শুনিয়ে হলেও তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
সুন্দরবন উপকূল সংলগ্ন কয়রা উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির জানান, মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় বেলা ১২টা পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। তবে, দুপুরের পর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।
দাকোপ উপজেলার ছুতারখালী ইউপ চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত কেউ সাইক্লোন শেল্টারে যায়নি। তবে বিকাল থেকে ৪টা থেকে সবাই সাইক্লোন শেল্টারে যাবে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক জোয়ার্দার জানান, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে খুলনা জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬০৮টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের ১০৮টি, কয়রার ১১৬টি, পাইকগাছার ৪৫টি ও বটিয়াঘাটার ২৩টিসহ ২৯২টি আশ্রয়কেন্দ্রকে আগেভাগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতোমধ্যে ৬০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্থানীয় অধিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসনকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছে ১১৬টি মেডিক্যাল টিম ।