স্পিডবোট দুর্ঘটনা: এলাকাবাসীর চোখের জলে একই পরিবারের ৪ জনের চিরবিদায়
গতকাল (সোমবার) মাদারীপুরের শিবচরের পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ছিলেন খুলনার একই পরিবারের ৪ জন। এলাকাবাসী চোখে জলে চিরবিদায় দিয়েছেন তাদের।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৯টায় তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামে জানাজা শেষে নিহত মনির শিকদারের মা লাইলী বেগমের কবরের পাশে তাদের দাফন করা হয়।
এর আগে, রোববার রাতে মা লাইলি বেগমের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শেষবারের মতো তাকে দেখতে ঢাকার মিরপুর থেকে রওনা দেন ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী মনির শিকদার, তার স্ত্রী হেনা বেগম এবং তাদের তিন মেয়ে সুমী, রুমি ও মীম। কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুভর্তি বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় নিহত হন মনির শিকদারের বড় মেয়ে মীম ছাড়া বাকি চারজন।
এর আগে একসঙ্গে একই পরিবারের এতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু দেখেনি তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামের মানুষ। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু মীমকে ঘিরে ছিলে আত্মীয়-স্বজনসহ গ্রামবাসীর শোকের মাতম।
এমন শোকাবহ অবস্থায় নিহত চারজনের জানাজায় পারোখালী গ্রামসহ এলাকার সর্বস্তরের হাজারও মানুষের অশ্রুসিক্ত উপস্থিতি। জানাজা শেষ না হতেই আকাশ কালো করে নামে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। যেন তাদের অকাল মৃত্যুতে প্রকৃতিও কেঁদে ওঠে!
পরে সারিবদ্ধভাবে তাদের মরদেহ দাফন করা হয় রোববার রাতে মৃত্যু হওয়া লাইলি বেগমের কবরের পাশে।
নিহতদের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সষ্পাদক মো. কামরুজ্জামাল জামাল, তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এফএম অহিদুজ্জামান, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সফিকুল রহমান পলাশ, অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মাওলানা শারাফাত হোসেন দিপু প্রমুখ।
নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, রোববার রাতে মনিরের মা লাইলি বেগম মারা যান। মায়ের জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার মিরপুর-১১ মসজিদ মার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী মনির শিকদার, তার স্ত্রী হেনা বেগম এবং তাদের তিন মেয়ে সুমী, রুমি ও মীম সেহরির খাবার খেয়ে খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারোখালী গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু বাবা-মার সঙ্গে সুমী ও রুমিরও শেষ দেখা হয়নি প্রাণপ্রিয় দাদিকে।
মা-বাবা ও দুই বোনকে হারিয়ে বেঁচে থাকা ৯ বছরের মীম যেন অকূল পাথারে পড়েছে। পরিবারে এখন আর কেউ নেই তার। প্রিয়জনদের হারিয়ে যেন কাঁদতেও পারছে না শিশুটি। অবুঝ এই শিশুকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই স্বজন-প্রতিবেশীদের। এই শিশু এখন কীভাবে কোথায় থাকবে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে- এ নিয়ে এখন স্বজন-প্রতিবেশীরা চিন্তিত।
তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, 'উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ১ সপ্তাহের মধ্যে মীমের জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মীম বড় হওয়া এবং তার বিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করব বলে এলাকাবাসীর কাছে কথা দিয়েছি।'
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তেরখাদা উপজেলা সদরের পারোখালী গ্রামে মনির শিকদারের বাড়িতে তাদের মরদেহগুলো এসে পৌঁছায়। সেই থেকে বাড়িসহ পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম।