হাসিনা-মোদি সাম্প্রতিক আলোচনা: তিস্তা ও পেঁয়াজ প্রসঙ্গ
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বন্টনের অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির ব্যাপারটি আলোচনায় আসে।
ইন্ডিয়া টুডে টিভি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত তিস্তা নদীর বিরোধ সমাধানে অনুরোধ করেছেন নরেন্দ্র মোদিকে। ভারত এ সমস্যা সমাধানে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্যাটি সমাধানে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে বুঝতে পারছেন বলেও জানা গেছে গণমাধ্যমটির সূত্রে।
ভার্চুয়াল সম্মেলনের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, "২০১১ সালে উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে তিস্তার পানি বন্টনের অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে 'ভারতের আন্তরিকতা' এবং মোদি সরকারের 'অব্যাহত প্রচেষ্টা' আছে বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।"
তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক বিষয়ই নয়, এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিম বাংলা সরকারের বিতর্কিত বিষয়ও।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এ চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে পানির সংকট দেখা দিবে বলেই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি উভয়ের জন্যই তিস্তা চুক্তি একটি নির্বাচনী ইস্যু। কিন্তু এ চুক্তির বিরোধিতার মাধ্যমে মমতা আন্তর্জাতিক আইনও ভঙ্গ করছেন। ভার্চুয়াল সম্মেলনের সময় নরেন্দ্র মোদির ব্যাকড্রপে (ভিডিও কনফারেন্সে পেছনের দৃশ্য) কোচবাড়ি রাজবাড়ির দৃশ্য দেখা যায়।
গত বুধবার উত্তরবঙ্গের র্যালির আয়োজন করেন মমতা ব্যানার্জি। এ অঞ্চলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কেন কোনো আসন জেতেনি এ প্রশ্ন রাখেন তিনি র্যালিতে। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো নির্বাচনে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিস্তা চুক্তি পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশে গুরূত্বপুর্ণ নির্বাচনী ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন পর্যবেক্ষকের মতে তিস্তা চুক্তির আলোচনায় মোদির সমর্থন, মোদি সরকার 'অব্যাহত প্রচেষ্টা' চালিয়ে যাচ্ছে বলে মোদি তার প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি দ্রুতই তিস্তা চুক্তি সই করতে চান।
উভয়পক্ষই তিস্তা চুক্তির আলোচনার সাথে সাথে অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৬টি অভিন্ন নদী- মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিবন্টন সংক্রান্ত অগ্রিম অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির ব্যাপারে উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে বলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।
পরবর্তী যৌথ নদী কমিশোনের বৈঠকের ব্যাপারেও উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যৌথ নদী কমিশনের ইতিবাচক ভূমিকার কথা তুলে ধরে উভয় নেতাই দ্রুত কমিশনের সচিব পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন।
সেচকাজে কুশিয়ারা নদীর নদীর সহযোগিতার প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, সেচকাজে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারে রহিমপুর খাল খননের অনুমতি চেয়ে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। উভয় পক্ষেরই কুশিয়ারা নদী থেকে তুলে নেয়া পানি পরিমাপের সুবিধার জন্য এবিষয়ে প্রস্তাবিত এমওইউ দ্রুত সই করার অনুরোধ জানানো হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে।
ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ সহ কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার বিষয়টিও আলোচনায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে এব্যাপারে বলা হয়েছে, পেয়াজ থেকে শুরু করে ভ্যাকসিন- সবকিছুতেই বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশের 'প্রকৃত বন্ধু' হিসেবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
পেঁয়াজ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগেই বাংলাদেশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি ভারতের পক্ষ থেকে গুরূত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানানো হয় যৌথ বিবৃতিতে।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। সেইসাথে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন মোদি।