হিলিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, বিপাকে সাধারণ মানুষ
সরকার ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও দিনাজপুরের হিলিতে মিলছে না সেই নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস। প্রত্যেকটি গ্যাসের সিলিন্ডারে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি ১০০ টাকার বেশি দাম হাঁকানো হচ্ছে। এদিকে লকডাউনের মাঝে হঠাৎ করে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষজন।
সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব ধরনের এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের সরবরাহ রয়েছে, তবে সবগুলো গ্যাসের সিলিন্ডার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিএম কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, বসুন্ধরা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার টাকা, যমুনা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার টাকা, ওমেরা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও কিছুদিন আগেও এসব কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার সাড়ে ৮০০ টাকা ছিল, এর আরও আগে ৯৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের নতুন দাম ৮৯১ টাকা নির্ধারণ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে যা জুলাই মাস থেকে কার্যকর করা হয়। এর আগে জুন মাসে এই দাম ছিল ৮৪২টাকা, মে মাসে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯০৬টাকা।
হিলি বাজারের নির্মল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সত্বাধিকারী নির্মল প্রামাণিক বলেন, 'এক সপ্তাহ আগেই গ্যাসের সিলিন্ডার কিনলাম ৯০০ টাকা করে,কয়েকদিনের ব্যবধানেই একলাফে রাতারাতি তার দাম বেড়ে বর্তমানে ১ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। আমার হোটেলের রান্নার কাজে প্রতিদিন ২টি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগে। কিন্তু হঠাৎ করে একলাফে সিলিন্ডার প্রতি ১শ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। একেতো করোনার কারনে তেমন বেচা কেনা নেই শুধুমাত্র পার্সেল খাবার বিক্রি করছি কিন্তু এর উপর যদি গ্যাসের দাম বাড়ে তাহলে তো সমস্যা। সেটাতো খাবারের দামের উপর প্রভাব পড়বে বাধ্য হয়ে আমাদের দাম বাড়াতে হবে।'
হিলি বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার নিতে আসা গোলাপি বেগম বলেন, 'প্রতিমাসে পরিবারের রান্নাবান্না করতে দুটি করে গ্যাসের সিলিন্ডার লাগে। খড়ির চেয়ে গ্যাসের খরচ কম হওয়ার কারণে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করি রান্নার কাজে। কিন্তু যে গ্যাস সিলিন্ডার কদিন আগে কিনলাম ৯০০ টাকা করে সেই গ্যাস সিলিন্ডার এখন ১ হাজার টাকা করে। একেতো করোনার কারণে আয় রোজগার তেমন নেই বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে, এর ওপর যদি এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ে তাহলে আমরা চলবো কীভাবে?'
'সরকার টিভিতে ঘোষণা দিচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমছে কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি উল্টো অবস্থা, সিলিন্ডার প্রতি গ্যাসের দাম ১০০ টাকা করে বেশি। এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়,' দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার বলেও জানান তিনি।
হিলি বাজারের বিএম কোম্পানির এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার মশিউর রহমান বলেন, 'বর্তমানে গ্যাসের সিলিন্ডার ১ হাজার টাকা করে বিক্রয় করা হচ্ছে। কোম্পানিতে ১ হাজার ২০টাকা করে আমাদের সিলিন্ডার প্রতি দাম ধরছে এর মধ্যে কোম্পানি ৮০টাকা আমাদের দেয় যার মধ্যে পরিবহন খরচ ও লাভ রয়েছে। আমরা আমাদের লাভের মধ্যে থেকে আরও ২০টাকা কম করে ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছি। এছাড়াও বিভিন্ন পাইকারদের কাছে আমরা বিক্রি করছি ৯৭০টাকা করে। সরকার রেট বেধে দিলে কী হবে কোম্পানি তো আমাদের সেই দাম মাল দিচ্ছেনা যার কারনে আমরা বেশি দামে কিনে আনছি বেশি দামে বিক্রি করছি।'
বিরামপুরের বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার জাকিরুল হক বলেন, 'কোম্পানির ডিও রেট ১ হাজার টাকা, আমরা সেই দামেই গ্যাস বিক্রি করছি।এনার্জি রেগুলেশন গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলোর সাথে কোন প্রকার সমঝোতা না করেই। যার কারণে ওনারা সেই মূল্য না মেনে কোর্টে রিট করেছে, বর্তমানে নিজস্ব ভাবে রেটেই বিক্রি করছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দাম তো আমরা পাচ্ছিনা, তো ওই দামে দেব কীভাবে।'
বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের বিভাগীয় ম্যানেজার জাহিদুর রহমান বলেন, 'সরকার যে গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তার সাথে আমাদের কোম্পানির রেট মিলবেনা। আমাদের কোম্পানির রেটে ১ হাজার টাকা করে প্রতি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছি। এটা শুধু আমাদের কোম্পানির গ্যাসের মূল্য নয়, সব গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির একই মুল্য। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্য মানছি না তা না, আমরা সন্মান করি, শ্রদ্ধা করি, তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে রিট করছি। কিন্তু আমাদের যে যে কস্টিংগুলো আছে এখানে সেগুলো এ্যড করেনি, যার কারনে গত ৭ তারিখে একটি গনশুনানি হওয়ার কথা ছিল, করোনার কারণে হয়নি। গনশুনানি হলে পর্যায়ক্রমে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।'
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, 'এরকম হইলে তো অবশ্যই দেখবো, দাম যদি খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করা থাকে সেক্ষেত্রে বেশি বিক্রির তো সুযোগ নেই। আমরা তাদের সাথে কথা বলে দেখি যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'