১১ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন, অসুস্থ পাঁচ শতাধিক
মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের স্ত্রী-সন্তানরাও মাঠে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের অনশন কর্মসূচির পঞ্চমদিন শ্রমিকরা স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনশন কর্মসূচি পালন করে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে অনশনে একাধিক শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খুলনায় অনশনে অসুস্থ পাঁচ শতাধিক
পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন কর্মসূচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম, ক্রিসেন্ট জুট, জেজেআই ও কার্পেটিং মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ মিলগেটে এবং স্টার জুটমিলের শ্রমিকরা খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মত অনশন কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় খুলনা-যশোর রুটে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, খুলনার সাতটি পাটকলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। সব কয়টি মিলেই শ্রমিকদের ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
অনশন চলাকালে বুকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ানো ১০-১১ বছরের এক শিশু বলে, ‘আমি শ্রমিকের সন্তান, আমার বাবা মজুরি না পাওয়ায় আমরা না খেয়ে মরতে বসেছি। টাকার অভাব পড়ালেখা করতে পারছি না। আমার বাবাকে বাঁচাও, পিতার মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন চাই, ঠিকমত লেখা পড়া করতে চাই’।
পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, সাতটি পাটকলের প্রায় ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এ অনশনে অংশ নিয়েছেন। টানা অনশনে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শরীরে স্যালাইন নিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন দাবি না মানা হবে, ততদিন অনশন চলবে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনা অ লের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের মধ্যে জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বাদে বাকি সাতটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ পাটকলগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে চালু থাকা ওই দু’টি পাটকলে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। পাটকলগুলোতে প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় সচিবলায়ে পাটমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হামিদুর রহামনের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের দল খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়েছে।
চট্টগ্রামে আন্দোলনরত সাত শ্রমিক অসুস্থ
মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো সভা, ভুখা মিছিল, প্রতীকী অনশন, বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রামের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা।
চট্টগ্রামের আমিন জুটমিল গেইটে চলছে এই আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) আন্দোলনরত ৭ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আমিন জুটমিল সিবিএ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, লাগাতার আন্দোলন চলছে। আন্দোলনরত অনেক শ্রমিক ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় ৭ জন শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ দফা দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। ফলে মিলের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
রাজশাহীর চার পাটকল শ্রমিক অসুস্থ
১১ দফা দাবিতে লাগাতার আমরণ অনশনে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীতে চার পাটকল শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
টানা পঞ্চম দিনের মতো চলছে শ্রমিকদের এ কর্মসূচি।
অসুস্থ শ্রমিকরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধা নওশাদ আলী, এমরান আলী, নজরুল ইসলাম ও মো. ইসলাম। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
গত রোববার দুপুর থেকে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত রাজশাহী পাটকলের প্রধান ফটকের সামনে শ্রমিকরা কর্মসূচি শুরু করেন।
১১ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। রাতেও তারা থাকছেন পাটকলের প্রধান ফটকের সামনে।
রাজশাহী পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, তীব্র শীত উপেক্ষা করেই তারা কর্মসূচি পালন করছেন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার পরও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দেন।
পাটকল শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি। সবশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন করার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা। সেই ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।