৩০০ কিলোমিটার জার্নি করে চিতাবিড়ালের জীবন বাঁচালেন দুই তরুণ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জের দুরত্ব ১৫৪ কিলোমিটার। আসতে যেতে ৩০৮ কিলোমিটার। এই ৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ জার্নি করে বিপন্ন একটি চিতাবিড়াল উদ্ধার করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুই প্রাণিপ্রেমি সোহেল শ্যাম ও খোকন থৌনাউজম।
জানা যায়, বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যপ্রানীপ্রেমি সোহেল শ্যাম জানতে পারেন, শ্রীমঙ্গল থেকে ১৫৪ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে এক ব্যক্তি একটি চিতাবিড়ালকে ৬-৭ দিন ধরে খাচায় বন্ধি করে রেখেছেন। কিন্তু বন্দি রাখলেও ঠিকমতো খাবার না দেওয়ায় সেটি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি জেনে সোহেল তার দীর্ঘদিনের প্রাণিসেবার সঙ্গী ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজমকে জানান। দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বনবিভাগকে জানিয়ে তারা নিজেরাই চিতাবিড়ালটি উদ্ধারে যাবেন।
খোকন থৌনাউজম বলেন, 'উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা যোগাযোগ করি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে। বনকর্মকর্তা আমাদের আগ্রহ ও ঘটনা শুনে উৎসাহ দেন এবং মৌলভীবাজার অফিস থেকে বনবিভাগের ৪ জন প্রতিনিধিকে সঙ্গে পাঠান। আমরা ৬ জন মিলে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। সুনামগঞ্জ থেকে যুক্ত হন বনবিভাগের আরেকজন স্থানীয় স্টাফ। সবাই মিলে চিতা বিড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে দেখি, ওর বয়স ৬-৭ মাস হবে। খাঁচার ভেতর ভাত দিয়ে রাখা হয়েছে। মাংসাশী প্রাণী বলে এসব খাবারে অভ্যস্ত না থাকায় সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।'
'চিতাবিড়ালটি উদ্ধারের পর সেবা করে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গল নিয়ে আসি মধ্যরাতে। রাস্তায় বিড়ালকে কোয়েল পাখি খেতে দেওয়া হয়। বর্তমানে বিড়ালটি লাউয়াছর জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে রয়েছে,' বলেন তিনি।
এদিকে, সোহেল শ্যাম বলেন, 'বিড়ালটি উদ্ধার করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা জানতে পেরেছি, এই বিড়ালের একজন সঙ্গী ছিল, তাকে গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমরা বনবিভাগের সহযোগিতায় সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে ওকে লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করে দেব। লাউয়াছড়া বনে এমন বিড়াল আরও দেখেছি; তাই এটি সেখানে সঙ্গী পাবে।'
দুই যুবকের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় দাবি করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম সালে সুহেল জানান, 'এই শীতের দিনে ৩০০ কিলোমিটার জার্নি করে স্বেচ্ছায় যারা যেতে পারেন, তাদের প্রানীপ্রেম আমাদের জন্য উদাহরণ। এমন কিছু মানুষের হাত ধরেই বন্যপ্রাণীরা রক্ষা পাবে।'
এদিকে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'এই দুই যুবকের প্রানীপ্রেম প্রশংসনীয়। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন, আমরাও করেছি। বনবিভাগের লোকজন তাদেরকে সঙ্গে নিয়েও গেছে। এভাবে বনবিভাগ আর সাধারণ মানুষ মিলেমিশে কাজ করলে এই দেশের বন্যপ্রাণী রক্ষা করা সহজ হবে।'
তিনি আরও জানান, বিড়ালটি বর্তমানে অসুস্থ রয়েছে, ওকে কয়েকদিন সেবা দিয়ে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করা হবে।