৩৪১ পেঁয়াজ আমদানিকারকের তথ্য সংগ্রহ করছে সরকার
ভারত দাম বাড়ানোর পর ১৫ আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে পেয়াজ আমদানি করা ৩৪১ ব্যবসায়ীর তথ্য সংগ্রহ করছে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর ও ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আমদানিকৃত পেয়াজের পরিমাণ, আমদানি মূল্য ও দেশের বাজারে বিক্রিত মূল্য ছক আকাড়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এনবিআরের সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উভয় সংস্থা। আমদানি মূল্যের সঙ্গে খুচরা বাজারে বিক্রিত পেয়াজের দামে বড় ধরনের পার্থক্য থাকায় ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারত মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার পর তিন মাসে ১,৬৭,৮০৬ টন পেয়াজ আমদানি করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দেশের আটটি স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া এসব পেয়াজের আমদানি মূল্য ৬৬০ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ব্যবসায়ীদের ইনভয়েস অনুযায়ী গত তিনমাসে আমদানিকৃত পেয়াজের গড়মূল্য ৩৯ টাকা ৩৩ পয়সা। কিন্তু এ সময়ে পেয়াজের দাম ১০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ২০০ টাকাও ছাড়িয়েছে।"
"কম দামে পেয়াজ আমদানি করে অতি মুনাফার লোভে অত্যাধিক দামে বিক্রি করা হয়েছে কিনা এ তথ্য যাছাইয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমদানিকারকদের জিজ্ঞাসবাদেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে," বলছেন ড. শহিদুল ইসলাম।
শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে সারাদেশের ৪৭ জন আমদানিকারকের তথ্য আমরা পেয়েছি। এরমধ্যে ১৩ জনকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ছাড়াও ঢাকার ৩৬ জন আমদানিকারকের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। এর মধ্যে ঢাকার সূত্রাপুরের মেসার্স ইবনুল এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, গুলশান কাঁচা বাজার সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রাজ্জাক, শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রহিম, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল ও চট্টগ্রামের মেসার্স এস এ গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের সাহাবুদ্দিন আলম অন্যতম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এরই মধ্যে হাতে পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা।
এদিকে পেয়াজ আমদানিকারকদের সঙ্গে রোববার এক বিশেষ বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া পেঁয়াজের আমদানিকারকদের কাছে পেঁয়াজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। মায়ানমার, তুরষ্ক, চায়না, মিশর থেকে যারা পেঁয়াজ আমদানি করেছে তারা তা কি দামে এনেছেন এবং কি দামে বিক্রি করেছেন তার তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই মাসের মধ্যে যারা পেঁয়াজ এনেছেন তাদের কাছ থেকে এই তথ্য চেয়েছে এনবিআর চেয়ারম্যান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের এমন একজন আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এনবিআর চেয়ারম্যান তথ্য চেয়েছে, কিন্তু সঙ্গে এটাও বলেছে ব্যবসায়ীদের ভয়ের কিছু নেই। এনবিআর শুধু এ বিষয়ে জানতে চায়, কোন ব্যবস্থা নেবে না।"
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে পেঁয়াজের সংকটের কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পরই রাতারাতি দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করছে, এখানে যদি সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পাকিস্তান থেকে শাদ এন্টারপ্রাইজ বিমানে করে ৮২ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। শাদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে অংশ নেওয়া হাফিজুর রহমান বলেন, "আমরা পেঁয়াজ আনার পর তা টিসিবির কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু টিসিবি তা কিনতে রাজি হয়নি। যে কারণে পাইকারী বাজারে ১৬০-১৬৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।"