‘অসুস্থ্য শিশুটিকে খুন করেছিলেন তার হতাশাগ্রস্ত মা’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার একটি বিল থেকে গত বুধবার দুই বছর বয়সী যে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ‘হতাশাগ্রস্ততা’ থেকে শিশুটিকে তার মা-ই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকার একটি বিল থেকে শিশু মো. রাফির (২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুটির মা সানোয়ারা বেগম (২৭)।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।
পুলিশের ভাষ্যমতে, সানোয়ারা বেগমের স্বামী মো. ফারুক মিয়া সৌদি আরব যাওয়ার সময় স্বজনদের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা শোধ দিতে না পারায় দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে পড়েন সানোয়ারা বেগম। আর সেই হতাশা থেকেই ছোট ছেলে রাফিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সানোয়ারা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর গ্রামের আশরাফ জালালীর ছেলে মো. ফারুক মিয়ার সাথে একই উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকার সাগর মিয়ার মেয়ে সানোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী ফারুক মিয়া একটি ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে চাকরির সুবাদে ঢাকায় চলে যান। জীবনযাত্রার মনোন্নয়নের জন্য ফারুক ম্যাচ ফ্যাক্টরির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমান। শ্বশুরবাড়িতে জায়গা সংকটের কারণে সানোয়ারা তার বাবার বাড়ি এসে তার বড় চাচার ঘরে বসবাস শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, তাদের সন্তান রাফি একটি বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। শরীরের কোথাও আঘাত পেলে বা কেটে গেলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধের জন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো লাগতো। স্বামী প্রবাসে যাওয়ার প্রায় তিন বছর হতে চললেও রাফির বিরল রোগের চিকিৎসা খরচ ও সাংসারিক খরচের যোগান দেয়ার পর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে পড়েন সানোয়ারা। এ থেকেই গত ৩০ অক্টোবর ভোরে রাফিকে প্রশ্রাব করার জন্য ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এরপর বাড়ির পাশে একটি বিলের কচুরিপনার ওপর রাফির মরদেহ ছুঁড়ে ফেলে দেন।
পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাফির দাদা আশরাফ জালালী ওইদিনই বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ‘সন্দেহজনক আচরণ’ দেখে সানোয়ারাকে আটক করে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান, বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী পুলিশ সুপার আলাউদ্দিন চৌধুরী ও ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।