‘আমার গ্রাম আমার শহর’ পল্লী উন্নয়নের মেগা প্রকল্প
শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌছে দিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। দেশজুড়ে প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র গড়ে তোলার এ প্রকল্প পরিকল্পনাধীন পর্যায়ে রয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) প্রণীত কর্ম-পরিকল্পনার খসরা অনুসারে,
'আমার গ্রাম আমার শহর' শীর্ষক এ মেগা প্রকল্পের অধীনে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলি লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
শুধুমাত্র এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কাজেই প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ১৫টি গ্রামকে পাইলট মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। পাইলট মডেল গ্রাম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতায় দেশের অন্যান্য গ্রামগুলোতে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ কাজ সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৫টি মডেল গ্রামের ৮টি দেশের আটটি বিভাগে গড়ে তোলা হবে।
এছাড়া হাওর, উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ী এলকা, চর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল , বিল এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে একটি করে বাকি সাতটি গ্রামকে মডেল গ্রাম করা হবে। বিশেষ এসব অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন বেশ কঠিন। আর এসব এলাকায় মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামীণ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে।
অর্থনৈতিক কমকান্ডের বাইরে সামাজিক ও সংস্কৃতি বিষয়গুলোও মডেল গ্রামে গুরুত্ব পাবে।
সরকারে ঘোষণা অনুযায়ী মডেল গ্রামে যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়:নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।
আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ইতোমধ্যে ১১৬টি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করছে। এ কর্মযজ্ঞের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিস্তারিত সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে যার ভিত্তিতে আরও বেশ কিছু নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে। সমীক্ষাগুলো শেষ হলে চূড়ান্ত ব্যয় জানানো হবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান ২৩৭ প্রকল্পও 'আমার গ্রাম আমার শহরে'র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ওই প্রকল্পগুলোকে এ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শহরে সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণে তার জন্য ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩৬টি গবষেণা করছে এলজিইডি। আগামী জানুয়ারিতে সমীক্ষার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহরের সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণ করা হলে এবং গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা গেলে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি গ্রামে হালকা শিল্পের সম্ভাবনাও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষের শহরমুখীতা কমবে- বলে আশা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মডেল গ্রাম স্থাপনে কাজ করবে। তবে মডেল গ্রাম স্থাপনে নেতৃত্ব দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে পাইলট গ্রামের তালিকা চূড়ান্ত হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ কমিটির প্রধান।
এরপরই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা মডেল পাইলট গ্রাম বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে। এরমধ্যে অনেক সংস্থা তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজও করে যাচ্ছে। অনেক সংস্থা এরমধ্যেই প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, "শহরের সব আধুনিক সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমীক্ষার কাজ করছে। সমীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প।"
তিনি বলেছেন, আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি প্রতি দুই মাস পর পর প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্প নতুন ধারণা নিয়ে আলোচনা করছে। পুরো বিষয়টি তদরকি করছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। 'আমার গ্রাম আমার শহর' বাস্তবায়নে একটি মহাপরিকল্পনাও প্রণয়নের কাজ চলছে।
সমৃদ্ধ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে গত নির্বাচনী ইশতেহারে 'আমার গ্রাম আমার শহর' বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দপ্তরগুলোকে ইশতেহারের আলোকে বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যোগ করেন মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা ২২ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। দেশের বর্তমানে ০.৫-১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। এর বড় একটি অংশ বসতভিটায় রূপান্তরিত হচ্ছে। কৃষি জমি হ্রাসের কারণে এ হার অব্যাহত থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত এবং গ্রামের জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। ।
তাই জনবহুল গ্রামগুলোতে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে বহুতল ভবনের সমন্বয়ে একটি কম্প্যাক্ট টাউনশিপ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এর ফলে সড়ক বিদ্যুৎ, অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে। গ্রামগুলো সহজে বন্যা মুক্ত হবে। এ ধরনের আদর্শ গ্রামে বিদ্যালয়, হাসপাতাল ক্লিনিক থাকলে সহজে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া যাবে। কৃষি জমি বাঁচবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশ বাসযোগ্য থাকবে। এ কারণে গ্রামীণ গৃহায়ন বা কম্প্যাক্ট হাউজিংয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, বলে জানান কর্মকর্তারা।
এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সব উপজেলার জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রকল্প অনুমোদনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সরকারের মডেল গ্রাম প্রকল্প গ্রামীণ জনপদের মানুষের মৌলিক সরকারি সুবিধা পাওয়ার সহায়ক হতে পারে এবং এটি শহরের ওপর চাপ কমাবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেছেন, আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়া। এর জন্য সামগ্রিক চিন্তা করতে হবে।
তাঁর মতে, "বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আমাদের ধাপে ধাপে যেতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ শহরের সব সুবিধা আগে জেলা পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে। এরপর এসব সুবিধা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আর এভাবেই আমার মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠার কাছাকাছি যেতে পারব। ফলে বড় নগরীগুলোয় মানুেষর চাপ কমে আসবে।"
এদিকে আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গবেষণা বা সমীক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এলজিইডি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়াসহ বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে।
এলজিইডি'র ১৫টি মডেল গ্রাম:
স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৫টি পাইলট মডেল গ্রাম ঘোষণা দেয়। মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠায় এ সংস্থার ৩৬ সমীক্ষার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
গ্রামগুলোতে কীভাবে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩৬ টি সমীক্ষা কাজ চলমান। আগামী জানুয়ারিতে সমীক্ষার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক আবুল মঞ্জুর মো. সাদেক।
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এসব সমীক্ষা পরিচালনা কাজ চলছে। সমীক্ষা চলছে দেশের সব ধরনের গ্রাম নিয়ে। হাওর অঞ্চলে মডেল গ্রাম কেমন হবে, কিংবা চর এলাকায় কেমন হবে; যেখানে নৌ-পথ ছাড়া যোগাযোগের কোনো উপায় নেই সেখানে কীভাবে সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাবে- তা উঠে আসবে সমীক্ষা প্রতিবেদনে।
মডেল গ্রামে মানসম্মত শিক্ষা ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে- এসব বিষয়ও সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আবুল মঞ্জুর বলেন, "যে ১৫ টি গ্রামকে প্রথমে মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা হবে সেগুলো প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হলেও বিভিন্ন জটিলতার আশঙ্কায় তা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। সমীক্ষার কাজ শেষ হলে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এরপর পর্যায়ের ক্রমে দেশের সব গ্রামকে মডেল গ্রামে হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যেখানে শহরের সব নাগরিক সুবিধা থাকবে। তথন মানুষ শহরমুখী না হয়ে গ্রামমুখী হবে।"
সমবায় অধিদপ্তরের বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম:
পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১০টি গ্রামকে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন সমবায় অধিদপ্তর। পাইলট প্রকল্প সফল হলে দেশের সব গ্রামে একইভাবে মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠান করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তরটি। ইতোমধ্যে ৪৯.৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সমবায় অধিদপ্তরের মতে, গ্রামের অনেক জমি অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে, অনেক পুকুর রয়েছে, যে খানে মাছ চাষ হয় না। গ্রামীণ সড়কের দুপাশে ফলজ বা বনজ গাছ নেই। বাড়ির আঙ্গিনা উৎপাদনমুখী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয় না। উদ্বুদ্ধকরণ, তথ্য ঘাটতি এবং দক্ষতা ও প্রযুক্তির অভাবে গ্রামীণ এলাকার মানবসম্পদসহ যে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তার অনেকাংশে অপচয় হচ্ছে।
এজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় যৌথতার ভিত্তিতে শস্য চাষ ছাড়াও প্রতিটি গ্রামে একটি করে মংস্য ও ডেইরি খামার স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে ৫০০ সদস্যের সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। সসস্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি গ্রামে দুটি করে ট্রাক্টর ও ট্রান্সপ্লান্টার এবং একটি করে হারভেস্টার ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সমিতির সদস্যরা দেবে ৩০ শতাংশ বাকি ৭০ শতাংশ অর্থ প্রকল্পে থেকে দেওয়া হবে।
গ্রামে গরু ও গাভি পালনে সংকর জাতের দুটি গরু পালন মডেল চালু করা হবে। এজন্যে প্রকল্পের বিশেষ তহবিল থেকে গরু ও গাভি পালনে আগ্রহীদের ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গ্রামে কৃষি উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া, প্রতিটি গ্রামেে একটি কমিউনিটি ভবন স্থাপন করা হবে। যেখানে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণে ক্ষুদ্র পর্যায়ের সংরক্ষণাগার থাকবে।
নিকটবর্তী বাজারে বা প্রোথসেন্টারে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রত্যেক সমিতিতে একটি পিআপ ট্রাক সরবরাহ করা হবে। সদস্যদের উৎপাদিত পণ্য সমবায় সমিতির নিজস্ব নামে (ব্রান্ড হিসেবে) বিপণন করা হবে। এছাড়া, প্রত্যেক সমবায় সমিতিকে সমবায় অধিদপ্তরের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে লিংক করে দেওয়া হবে বলে প্রকল্প প্রস্তবনায় উলেখ করা হয়েছে।
সমিতির সদস্যদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রতিটি গ্রাম সমিতিতে দুই কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে চাহিদা ভিত্তিতে যেকোনো সদস্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনাসুদে ঋণ সুবিধা পাবে। তবে কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের উদ্যোক্তাদের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ৩ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ ওই ঋণ ফেরত দিতে হবে। ঋণ নেওয়ার ছয় মাস পর থেকে কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।
প্রকল্পের আওতায় দ্বিতল কমিউনিটি ভবন হবে ৩৪৬৮ বর্গফুটের জায়গার ওপর। যেখানে বঙ্গবন্ধু পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, কমিউনিটি হল, প্রশিক্ষণ কক্ষ, ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র, কৃষি পণ্য রাখার সংরক্ষণাগার এবং প্রদর্শনীকেন্দ্র থাকবে।
মডেল গ্রাম হলেও গ্রামগুলোতে শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ৭ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড পূর্ববর্তী দেশের দারিদ্র্য হার বিবেচনায় দারিদ্র্যের হার কমানোর এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সমবায় অধিদপ্তর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ (২০১৯) হিসাব অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ। কিন্ত কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪০ শতাংশের বেশি হয়েছে বলে একাধিক গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে।
মডেল গ্রামের জন্য পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সাত বিভাগের যে দশটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা ও ঢাকা বিভাগের রয়েছে দুটি করে গ্রাম। এগুলো হলো; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতি-শ্রীরামকান্দি, শরিয়তপুরের ভেদরগগঞ্জ উপজেলার চরভাগা মিয়ারচর গ্রাম এবং বরিশালের গৌরনদীর হোনাবাদ এবং মুলাদীর চর কমিশনার গ্রাম। এছাড়া, জামালপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলার চরভাটিয়ানি, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের পোমপাঁও, সুনামগঞ্জের ডুংরিয়া, যশোর মিনারামপুরের পাড়ালা এবং রংপুরের মিঠাপুকুরের রতিয়া।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট প্রত্যেক গ্রামে যে ৫০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, তারমধ্যে ৩০ শতাংশ বা ১৫০ জনই নারী।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, আইসিটিসহ মোট ১৭টি সেবা গ্রাম পর্যায়ে নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সহযোগীর প্রয়োজন হবে বলে সমবায় অধিদপ্তর জানিয়েছে।
এনিয়ে সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রারার ও মহাপরিচালক ড. মো. হারুন - অর - রশিদ বলেন, "কোভিড পরিস্থিতির কারণে গ্রামে দারিদ্রের হার বেশি, ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তবে অনুমোদন পাওয়ার পরও প্রকল্পটি সংশোধন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এখন প্রতিগ্রামে ৫০০ জন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য ধরা হয়েছে, পরে তা বাড়ানো যেতে পারে।"
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তিসহ অন্যান্য সেবা কীভাবে নিশ্চিত হবে, জানতে চাইলে হারুন - অর - রশিদ বলেন, সচেতনতা বাড়লে উপজেলায় গিয়ে এসব সুবিধা নিতে পারবে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
হাওরাঞ্চলে এলজিইডির মডেল গ্রাম:
হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠান করতে চায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। চলমান এই প্রকল্পের আওতায় শুরুতে পাইলট পাঁচটি মডেল গ্রাম করার পরিকল্পনা ছিল। পরে বাস্তবায়ন জটিলতায় ২টি মডেল গ্রাম স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের বিসম্বরের চাঁন্দেগাঁও এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হামিদপল্লীকে মডেলগ্রাম করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চান্দেরগাঁও গ্রামে জরিপের কাজও শেষ হয়েছে এবং দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মডেল গ্রামে হাওর এলাকায় জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি কমানো এবং আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আয়বর্ধক কর্মকান্ড বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার স্বাবলম্বীতা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বচ্ছতাবৃদ্ধি , একাতা প্রতিষ্ঠা , মানসিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, পুঁজি গঠন এবং নারীর ক্ষমতায়নে জোর দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে হাওর অবকাঠামো ও জীবনযাত্রা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোপাল চন্দ্র সরকার বলেন, হাওরের সড়ক অবকাঠামো একটা বড় সমস্যা। ফলে এমন ভাবে সড়ক নির্মাণ করা হবে যাতে সারা বছরই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে লোকজন যাতায়াত করতে পারবে। গ্রামে কোথায় স্কুল হবে, সে অনুযায়ী সড়ক অবকাঠামো তৈরি হবে। সব অবকাঠামো হবে পরিকল্পনামাফিক। এ সংক্রান্ত প্রকল্প নকশা তৈরির কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু অবকাঠামো নয়, গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান এবং আয় বাড়াতে নানা ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেতে পারে। এছাড় ডেইরি ফার্ম, পোলট্রি ফার্মসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ঋণ কর্মসূচি চালু থাকবে। শতভাগ স্কুল ভর্তি, বাল্যবিবাহ রোধ করা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগগুলো গ্রামে চালু করা হবে। মডেল গ্রামের একজনও কর্মহীন থাকবে না। আর এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মিঠামইনের হামিদপল্লীকে মডেল গ্রামের জন্য চিহ্নিত করা করা হলেও শেষপর্যন্ত তা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র এক বছর। এই সময়ে কাজ শেষ করা যাবে কিনা- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানান প্রকল্পের কর্মকর্তারা।