‘আশ্রয়কেন্দ্রে যামু না, আল্লায় নেতে আইলে লইয়া যাউক’
দু'দিন ধরে বরগুনার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম নেই। নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে জেলার প্রায় সাত হাজার স্বেচ্ছাসেবী। তাদের অনুরোধ শুধু একটাই; ঝড় শুরুর আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার! গত দুদিনের প্রচেষ্টায় তাদের এই ছোট্ট অনুরোধটি পৌঁছে গেছে বরগুনার সকল ঘরে ঘরে।
জেলাজুড়ে প্রচার-প্রচারণার পরও যাদের এখনও টনক নড়েনি তাদেরই একজন বরগুনার সদর উপজেলার বৃদ্ধা সালেহা বেগম (৬৫)।
মঙ্গলবার বিকেলে বরগুনার আকাশে যখন কালো মেঘের ঘনঘটা। তখন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থা ঘুরে দেখার পথে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় বৃদ্ধা সালেহা বেগমের।
আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে বৃদ্ধা সালেহা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আশ্রয়কেন্দ্রে যামু না, আল্লায় যদি নেতে আয়- লইয়া যাইবে।"
বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় এরকম সালেহা বেগমদের অভাব নেই।
তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অধিকাংশই আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। তারা প্রশাসনের অনুরোধ শোনেননি।"
তিনি আরো বলেন, "ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় যারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছেন, পরবর্তীতে আমরা তাদের লাশ দেখতে পেয়েছি। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ঘূর্ণিঝড় সিডরের মতোই শক্তিশালী। যেহেতু আমরা অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না, তাই আমাদের জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করতেও পারে।"
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে বরগুনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, পোটকাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গোলবুনিয়া শিশু-কিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্র তিনটি একেবারে ফাঁকা পড়ে আছে। ফাঁকা কেন্দ্রগুলোতে পাহারার দায়িত্বে আছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওবং কর্মচারীরা।
পোটকাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী রুহুল আমিন বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে গত দুদিন ধরে আমরা স্কুল খুলে রেখে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এখানে কোন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, "ইতোমধ্যেই বরগুনার সাধারণ মানুষকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। বরগুনায় ৬১০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইফতারের পাশাপাশি রাতের খাবার ও সেহরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "সন্ধ্যার আগেই আমরা সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলেছি। আমাদের এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাবে না, তাদের খুঁজে বের করে ধরে ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে।"