ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি, বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিক্রেতা
কোরবানিকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পশুর হাট। বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর ছোট ও মাঝারি গরুর বেশি বিক্রি হচ্ছে।
৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা—এই বাজেটে কোরবানির পশুর চাহিদা এবার বেশি। এই দামের গরু দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রিতারা।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাটগুলো ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় ছোট গরুগুলো ১৫-২০ হাজার টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি কারণে এমনটি হয়েছে।
ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ হাটে ৩ দিন হয় অস্ট্রেলিয় ফ্রিসিয়ান জাতের গরু নিয়ে এসেছেন মোহম্মদ হারুন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আড়াই বছর ধরে গরুটিকে লালন-পালন করেছি।
'২৩ মণ ওজনের এ গরুটি গ্রামের বাড়িতে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। ভেবেছিলাম তেজগাঁও শিল্প এলাকায় হাট, শিল্পপতিরা বেশি দাম দিয়ে কিনে নিবেন। এখন তো ক্রেতারা দামই বলে না।'
হারুন বলেন, তিনি আর বড় গরু নিয়ে ঢাকায় আসবেন না।
ঢাকার আফতাবনগর হাটে পাবনা থেকে ফরিদ হোসেন ৩৬টি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন। প্রতিটির ওজন প্রায় এক হাজার কেজি করে।
ফরিদ বলেন, '১৭টি গরু বিক্রি করেছি। কোনোটা ৩ লাখ, কোনোটা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে এতে আমাদের লাভ হবে না। এক বছর আগে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় গরু কিনে লালনপালন করার পর হাটে দাম বলছে ৩ লাখ টাকা।
'প্রতিটি গরু পালনে প্রতি মাসে খরচ আছে ১৫ হাজার টাকা। তার ওপর ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ আছে। তাই কিছুটা লস হলেও বিক্রি করে চলে যাব। আর বড় গরু পালব না।'
রাজধানীর গাবতলী হাটে অস্ট্রেলীয় ফ্রিসিয়ান জাতের ৪০ মণের গরুর নিয়ে এসেছেন মো. হারুন। তিনি গরুটির মূল্য চাইছেন ১২ লাখ টাকা। কিন্তু সেভাবে দামই বলছেন না ক্রেতারা।
বিক্রেতা হারুন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা দাম উঠেছে। ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা পেলে বিক্রি করে দেবেন।
হারুন জানান, 'এক লাখের নিচে গরুগুলো চাহিদা বেশি।'
তবে শুক্রবারও সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশুর হাটে গরু নিয়ে আসতে দেখা গেছে ব্যাপারীদের।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ হাটের তথ্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাটে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পশু আছে। আরও ট্রাক ভরে পশু আসছে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ হাটে গুলশান থেকে আসা ক্রেতা আমিনুল ইসলাম ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেছেন। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা গরুর বাজারে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে মোট ২১টি গরু নিয়ে এসেছেন হাসেম আলী।
তিনি বলেন, 'চারদিন আগে আমি এখানে এসেছি। আজ থেকে বাজার জমেছে। আমার এখানে বড় ৫টি গরু রয়েছে। বাকিগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।'
এদিকে পশুর হাটের পাশাপাশি নগরীর আশপাশের এলাকার ছোট-বড় খামারগুলোতেও ছুটছেন ক্রেতারা।
নগরীর বাকলিয়ার রাহাত্তার পুলের কে কে ক্যাটল ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহেদ হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ বছর ৪৮টি গরু তুলেছিলাম বিক্রির জন্য। আমরা নিরাপদ খাদ্য দিয়ে গরু পালন করি। তাই পরিচিতরাই বেশিরভাগ গরু কিনে নিয়ে গেছেন। আর মাত্র ৬টি গরু আছে। আমাদের ছোট গরু ছিল বেশি। ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দ্রুত বিক্রি হয়ে গেছে।'
গতবারের মতো এবারও বেসরকারি উদ্যোক্তার পাশাপাশি সরকারিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারিভাবে অনলাইনে ক্রয়কৃত গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা সংযোজন করা হচ্ছে এ বছর।