অতিরিক্ত বাস ভাড়া, পরিবহন সংকটে দেশজুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
সরকার জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর পর এবার ভাড়া বাড়িয়েছে আন্তঃজেলাসহ দেশের বেশিরভাগ বাস অপারেটররা।
এই সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রিকশা (প্যাডেল এবং ব্যাটারি উভয়ই) চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।
দেশজুড়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্টাররা সরেজমিনে দেখেন, কয়েকটি রুটে পরিবহন ভাড়া ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এছাড়া অনেক বাসের মালিক ও চালকরা তাদের কার্যক্রম আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পরিকল্পনা করছে।
শনিবার সকাল থেকে ঢাকায় আন্তঃনগর বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।
শহরের রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা নগণ্য থাকায় যাত্রীরা, মূলত অফিসগামীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
শত শত মানুষকে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে ও বাস স্টপে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অটোরিকশা ও রিকশার চাহিদা ছিল বেশি, ভাড়াও বেড়েছে।
মহসীন ভূঁইয়া নামক এক যাত্রীকে বাসের জন্য কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়।
শনির আখড়া থেকে মহসীনের অফিস মগবাজারে যেতে আজ অতিরিক্ত ১০ টাকা দিতে হয়েছে।
"আমার বাড়ি থেকে মগবাজার পর্যন্ত নিয়মিত বাসের ভাড়া ৩০ টাকা। কিন্তু হেল্পার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪০ টাকা নিল।"
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সামদানী খোন্দকার বলেন, "জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে কিছু বাস মালিক তাদের যানবাহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ শহরে বাস কম।"
"তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহন মালিকদের মধ্যে আজ দুপুরে বৈঠক হবে। আশা করছি এর পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।"
মুন্সীগঞ্জে শনিবার সকাল থেকে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাওয়ায় বেড়েছে যাত্রীদের দুর্ভোগ।
মুক্তারপুর সেতু দিয়ে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারদের অন্তত ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে আসা যাত্রী মিঠুন সাহা বলেন, "শুক্রবার সিএনজিতে ৫০ টাকা দিয়ে মুক্তারপুর ব্রিজ থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম। আজ আমার কাছ থেকে ৬০ টাকা নেওয়া হয়েছে। রাতারাতি ভাড়া বেড়েছে ১০ টাকা।"
কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হয়ে হিউম্যান হলারে চড়া আমিনা আক্তার বলেন, "বাসে উঠব ভেবে বাড়ি থেকে বের হলাম। কিন্তু আজ সকালে কিছুই পাচ্ছি না।"
তাকেও ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়েছে।
দীঘিরপাড় পরিবহন লাইনের কর্মচারী আমজাদ হোসেন বলেন, "আমাদের কাউন্টারগুলো এখন বন্ধ। নতুন ভাড়া নির্ধারণ না করা পর্যন্ত পরিষেবা বন্ধ থাকবে।"
খুলনায় আন্তঃনগর বাসের ভাড়া প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে অন্যান্য শহরে প্রায় ১৮টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে খুলনা-পাইকগাছা রুটের ভাড়া ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।
অন্যদিকে খুলনা-বাগেরহাট রুটে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা, খুলনা-যশোর রুটে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, খুলনা-কুষ্টিয়া রুটে ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা এবং খুলনা-যশোর রুটে ভাড়া বেড়েছে ৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, খুলনা- গোপালগঞ্জ রুটে ৩০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, "সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ায়নি। এত দামে জ্বালানি কিনে একই ভাড়া রেখে বাস চালানো সম্ভব নয়।"
এদিকে চট্টগ্রামে পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটে শনিবার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হাজার হাজার যাত্রী পড়েছেন দুর্ভোগে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
অন্যদিকে বরিশালে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আজকের মধ্যে ভাড়া না বাড়ানো হলে ধর্মঘটে যাবেন পরিবহন মালিকরা।
পাবনায় পাবনা-ঢাকা রুটের বাসের টিকিট এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা (নন-এসি) এবং ৯০০ টাকা (এসি) - গতকাল থেকে ভাড়া বেড়েছে ১০০ টাকা।
মৌলভীবাজারে ঢাকা-মৌলভীবাজার-ঢাকা রুটে বাসের ভাড়া আজ সকালে ৪৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী ও সিলেটে বাস ভাড়া এখনো বাড়েনি। কিন্তু সড়কে যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে।
পরিবহন মালিকরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং নতুন, বর্ধিত ভাড়া ঠিক করতে শিগগিরই বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।