খুলনায় বাস ভাড়া বাড়ল, বন্ধ হতে পারে বাস চলাচল
হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই খুলনায় বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। এরপর শনিবার সকাল থেকে খুলনায় বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
খুলনার সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ১৮ টি গাড়ী চলাচল করে।
এর মধ্যে খুলনা-পাইকগাছা রুটে ৩৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন বাড়া করা হয়েছে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে খুলনা বাগেরহাট রুটে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা, খুলনা – যশোর রূটে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, খুলনা –কুষ্টিয়া রুটে ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা ও খুলনা-গোপালগঞ্জ রুটে ৩০ টাকা বাড়ীয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রুটেও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
খুলনা-কুষ্টিয়া রুটে চলাচল কারী বাস চালক সোহেল রানা বলেন, 'হঠাৎ তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়ে গেলাম। যাত্রীরা এখন বাড়তি বাড়া দিতে চাচ্ছেন না। তেলের দাম বেড়েছে, এটা কেউ বোঝেন, আবার কেউ বোঝেন না। এই নিয়ে ঝগড়া বাধছে।'
তিনি বলেন, 'সরকার যদি তেলের দাম না কমায়, তবে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিব। বাস মালিক পক্ষ এখনো ঘোষণা দেননি। তবে তারা হয়তো বাস বন্ধ করে দিবেন।'
বিজন নামের আরেক চালক বলেন, 'বর্তমানে গাড়ি চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে চলা কষ্ট। এরই মধ্যে তেলের দাম বেড়ে গেল, এটা তো অনেক যাত্রী জানেনই না। তারা বাড়তি ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। এখন গাড়ি চালিয়ে তেলের দামও উঠাতে পারছি না।'
সোনাডাঙ্গা বাস স্টান্ডে কথা হয় আরেফিন নামের এক যাত্রী সাথে। তিনি বলেন, 'আমি গোপালগঞ্জ যাবো। এখন কাউন্টারে এসে দেখি বাড়া ৩০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু করার নাই। বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।'
এদিকে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে খুলনা বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, 'সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ায়নি। এত দাম দিয়ে জ্বালানি কিনে একই ভাড়ায় গাড়ি চালানো সম্ভব না।'
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।
সোনা বলেন, 'এখন যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে ঝগড়া বেঁধে যাবে। আর গাড়ি চালিয়ে যে টাকা আসবে, তা সব পাম্পে চলে যাবে। গাড়ির চালক, হেলপার ও শ্রমিকদের বেতন দেয়া যাবে না।
সরকারের উচিত ছিল, আগে পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে তেলের দাম বাড়ানো। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ালে আমাদের বিপদে পড়তে হয়।'
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখন যেহেতু গাড়ি চালানো সম্ভব না। তাই আমরা আলোচনায় বসব। সেখান থেকে হয়তো গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে।'