৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মহাখালীতে স্বাস্থ্য নগরীর প্রস্তাব
দেশের স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালীতে বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য নগরী গড়ে তোলার ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৫৩ একর জায়গায় গড়ে তোলা হবে এ স্বাস্থ্য নগরী।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব সংস্থাকে এক আঙ্গিনায় আনা হবে।
চিকিৎসা ,উচ্চ শিক্ষা ,গবেষণাসহ মোট ছয়টি জোনে ভাগ করে অবকাঠামো গড়ে তোলা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবনা চূড়ান্ত হলে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মহাখালিতে বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য নগরী স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
যদিও এর আগে থেকে প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নকশা প্রণয়ণের দায়িত্ব দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংস্থাটি সম্প্রতি নকশা তৈরির কাজ শেষ করেছে।
বর্তমানে প্রকল্প সাইটে চারটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আছে- সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইডিসিএইচ)।
নকশা অনুযায়ী একটি আধুনিক স্বাস্থ্য নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুরোনো ও ভগ্নদশা ভবনগুলো ভেঙ্গে তৈরি করা হবে আধুনিক ভবন।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় তিনটি নতুন প্রতিষ্ঠান ও দুটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- মা ও শিশু হাসপাতাল, রোবোটিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, স্কিন অ্যান্ড ভিডি ইনস্টিটিউট, এন্ডোক্রিনোলজি ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) অধ্যাপক আহমেদুল কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, "বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি বাস্তবায়ন করা গেলে হেলথ সেক্টর ডিসিপ্লিনড হবে। রেগুলেটরি ও মনিটরিং সব প্রতিষ্ঠান এক জায়গায় থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করতে এখন অনেক সময় নষ্ট হয়। হেলথ সিটি হলে একই আঙ্গিনায় সব প্রতিষ্ঠান থাকবে, তখন ফিজিক্যালি মিটিং করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।"
প্রাথমিক পরিকল্পনায় এ প্রকল্পের কাজ শুরুর ১০ বছরের নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও কবে নির্মাণ কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের তহবিলের অর্থায়ন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে, গত বছরে সংযুক্ত আবর আমিরাতের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে থেকে এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এই পরিকল্পনা । এক সঙ্গে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান কর্মকর্তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ টিবিএসকে বলেন, "বঙ্গবন্ধু হেলথ সিটি হলে এক জায়গায় মাল্টিপল সার্ভিস পাওয়া যাবে। জাতির জন্য এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। তবে ম্যাক্রো ইকোনোমিক কন্ডিশন দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
"এ প্রকল্প থেকে রাতারাতি সুফল আসবে না, দীর্ঘ মেয়াদে এটি ভালো সাপোর্ট দিবে। গ্রান্ড ফান্ডিংয়ে এ প্রজেক্ট হলে সমস্যা নেই, তবে লোন ফান্ডিংয়ে হলে ভালো ভাবে কস্ট বেনিফিট যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাস্থ্য নগরীতে অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্টানগুলো শুধু পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করবে। বিসিপিএস হাসপাতাল ও মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন হাসপাতাল হবে না। শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট বিল্ডিং এর মধ্যে থাকবে।
জোন ভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণ
প্রকল্পের প্রস্তাবিত নগরীতে হাসপাতাল, সার্ভিসেস, প্রশাসন, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র, পাবলিক হেলথ এরিয়া, ডিজি এডিজি এবং অন্যান্যা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট জোনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নিপসম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের স্টাফদের জন্য থাকবে আবাসিক সুবিধা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি), চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএমই), সচিবালয় (স্বাস্থ্য পরিষেবা), সচিবালয় (স্বাস্থ্য শিক্ষা), স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর প্রস্তাবিত প্রশাসনিক অঞ্চলে অবস্থিত হবে।
ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন, ইনস্টিটিউট অব রিউমাটোলজি, শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকের সদর দপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি), বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও গবেষণা অঞ্চলে অবস্থিত হবে।
প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা অঞ্চলের মধ্যে থাকবে একটি সিভিল সার্জন অফিস, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইডিসিএইচ), মা এবং শিশু হাসপাতাল, রোবোটিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, স্কিন অ্যান্ড ভিডি ইনস্টিটিউট, এন্ডোক্রিনোলজি ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) হাসপাতাল।
পাবলিক হেলথ জোন গঠিত হবে ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ, ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ( নিপসম), ইমিউনাইজেশনের সম্প্রসারিত প্রোগ্রাম (ইপিআউ), এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট।
আবাসিক সুবিধা জোনে নার্সিং ডর্ম, চিকিৎসকদের কনডো, স্টাফ কোয়ার্টার এবং ডাক্তারের কোয়ার্টার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া, ইউটিলিটি সার্ভিসেস জোনে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (সিএমএসডি), এমওএফপি গুদাম, ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স, ওয়ার্কশপ, এবং ট্রেনিং সেন্টার এবং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।