স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে ১,৬৪১ অবৈধ হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ
রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই কয়েক বছর ধরে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছিলো রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের এসপিএ রিভারসাইড মেডিকেল সেন্টার। নিবন্ধনহীন এ হাসপাতালটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নম্বর জালিয়াতি করে একাধিক ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতো। গত ১১ আগস্ট হাসপাতালটি পরিদর্শন করে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুধু এসপিএ রিভারসাইড মেডিকেল সেন্টারই নয়, গত দুই মাসে সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ১,৬৪১টি অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাডব্যাংক বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
একই সময়ে নতুন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এসেছে ১,১০৩ প্রতিষ্ঠান ও লাইসেন্স নবায়ন করেছে ২,১৮১ প্রতিষ্ঠান। এ থেকে সরকার ২০ কোটির বেশি টাকার রাজস্ব আয় করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের অভিযান শুরুর পর থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নতুন লাইসেন্সের জন্য ২,৩৩৯ আবেদন জমা পড়ে। লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য ৪,৫৯৮ আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে এই সময়ে নতুন লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ১,১০৩টি ও রিনিউ করা হয়েছে ২,১৮১টি।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে অথচ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সব শর্ত মানছে না, পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য তাদের তিন মাস সময় দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা নিয়ম মেনে লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স নেয়নি তাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে আবার অভিযান জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) বেলাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'গত ২৬ মের অভিযানের পর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নতুন লাইসেন্সের আওতায় এসেছে। অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে এখন অভিযান চালানো হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে শিগগিরই আলোচনায় বসবো আমরা। এরপর আবার জোরালোভাবে অভিযান চালানো হবে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স নিয়ে ১৯৮২ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে একবার নিবন্ধন নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আর তা নবায়ন করেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান শুরুতে ১০ বেডের অনুমোদন নিলেও পরে বেড বাড়ালে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানায়নি। অথবা বেডের সঙ্গে সংগতি রেখে জনবল বাড়ায়নি। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে অধিদপ্তর।
এর আগে গত ২৬ মে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশের সব অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নির্দেশনার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সারা দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোন ভুয়া বা অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবেনা। তবে এ সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এখন আমরা এটি সমাধানে কাজ করছি। প্রশাসনকেও আমরা এ বিষয়ে তাগিদ দিয়েছি। এসপি, ডিসি, সিভিল সার্জন সবাইকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে।'
মন্ত্রী বলেন, 'স্বাস্থ্যসেবা দিতে অনেক অবকাঠামো হয়েছে, যন্ত্রপাতি আছে, ম্যানপাওয়ার আছে কিন্তু মনিটরিং আরো শক্তিশালী করতে হবে। সেজন্য হাই পাওয়ারের চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা জানায়, বর্তমানে দেশে অনলাইনে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৩। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে ক্লোজ করা হচ্ছে।