ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সংবাদ ও টকশো প্রচার বন্ধের বিধান থাকছে খসড়া নীতিমালায়
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় "ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১" নামের যে খসড়া প্রস্তুত করেছে, সেখানে অনলাইন কোনো রকম সংবাদ ও টকশো সম্প্রচার বন্ধের বিধান রাখা হয়েছে।
এই নীতিমালা কার্যকর হলে কোনো গণমাধ্যম বিশেষ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং প্রিন্ট পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে কোনো রকম টক শো বা সংবাদ প্রচার করা যাবে না।
এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে গত বছর হাইকোর্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়।
সেই নির্দেশনার আলোকে তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি পৃথক দুইটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। গত জুন মাসে তথ্য মন্ত্রণালয় হাইকোর্টে যে খসড়া জমা দিয়েছে, সেটিকে তারা চূড়ান্ত খসড়া হিসেবে দাবী করেছে। বিটিআরসি এখনও তাদের নীতিমালার খসড়া হাইকোর্টে দাখিল করেনি।
এরকম বিধান রাখার কারণে দেশের গণমাধ্যমের সম্প্রচার কার্যক্রম সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং নেটফ্লিক্সের মত ওভার দ্য টপ বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে তারা নীতিমালা প্রণয়নের এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় "ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১" এর খসড়া নীতিমালায় ক্লোজ ১৫(৬) তে বলা হয়েছে, "ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সংজ্ঞায়িত কনটেন্ট ব্যতীত কেবলমাত্র বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রচার করা যাইবে। তবে কোনোক্রমেই সংবাদ বা টকশো পরিবেশন করা যাইবে না।"
খসড়ার ১৩ (৬) ক্লজেও বলা হয়েছে, "অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোনো ধরনের সংবাদ বা টকশো সম্প্রচার করা যাইবে না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। সারা বিশ্বের যেকোনো ধরনের পত্রিকা সংবাদ ও টকশোর মতো কনটেন্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করছে। কোথাও কখনো এরকম বিধিনিষেধ আরোপের কথা শুনিনি।'
তিনি বলেন, 'তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় যে খসড়া প্রনয়ন করেছে, এটি স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমের প্রচারকাজে বাধাস্বরুপ। এটি বেআইনি এবং সংবিধানে মত প্রকাশের যে স্বাধীনতার বিধান রয়েছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।'
এর অগে গত জুন মাসে অনলাইনে সংবাদের সঙ্গে ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ যেতে পারে, কিন্তু আইনানুযায়ী সংবাদ বুলেটিন কিংবা টকশো প্রচার করা যায় না বলে জানিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর সংবাদপত্রের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রচারের বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবাদপত্রের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে টকশো ও ভিডিও কনটেন্ট প্রচার করলে সেটি ডিক্লারেশনের বরখেলাপ হয় বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, বর্তমানে প্রিন্ট আর ডিজিটাল সমন্বয়ের মাধ্যমেই সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা নিহিত রয়েছে। কারণ সারাবিশ্বে ডিজিটাল বিপ্লবের প্রভাব সংবাদপত্রশিল্পকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোনো রকম সংবাদ ও টকশো সম্প্রচার বন্ধে বিতর্কিত বিধান রেখেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এদিকে
বিটিআরসি 'বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস- ২০২১' নামের যে খসড়া প্রস্তুত করেছে, সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাগরিকের মত প্রকাশ ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণে বিধান রাখা হয়েছে।
বিটিআরসির এই রেগুলেশন নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিকেরা ব্যাপক সমালোচনা করা সত্ত্বেও বিতর্কিত বিধানগুলো খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। আগামী ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে এই রেগুলেশনটি দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে বিটিআরসির পক্ষ থেকে।